ঋক বৈদিক যুগের ধর্ম সম্পর্কে বহু তথ্য প্রচলিত আছে| ঋগ্বেদ ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীনতম ধর্মগ্রন্থ| ঋকবেদে হাজার 28 টি সূক্ত থেকে প্রথম দিকে আর্যদের ধর্মীয় জীবনযাত্রা সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়| প্রকৃতি ঋক বৈদিক যুগে আর্যদের ধর্মবিশ্বাস গড়ে তোলার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ প্রেরণা যুগিয়ে ছিল|
সে যুগের মানুষ প্রকৃতিকে পূজো করত| তাদের এই ধারণা বদ্ধমূল হয়েছিল যে, পার্থিব সমস্ত বিষয় বা বস্তুর পেছনে কোন অলৌকিক প্রাণের অস্তিত্ব আছে| তাই পার্থিব বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে তারা বিভিন্ন দেব-দেবীর ঘনিষ্ঠ সংযোগকে কল্পনা করে নিয়েছিল|
আর্যরা বহু দেব-দেবীর অস্তিত্বে বিশ্বাসী ছিল| মাতৃ দেবতার পূজার ধারণা এই যুগে অনেকটা ম্লান হয়ে গিয়েছিল| এই সময় "দেব" পূজার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপিত হয়েছিল| ঋক বৈদিক যুগে আর্যদের সবচেয়ে জনপ্রিয় দেবতা ছিল ইন্দ্র| ঋকবেদের প্রায় 250 টি স্তোস্ত্র তার উদ্দেশ্যে নিবেদিত| বজ্র ও যুদ্ধ উভয় দেবতা হিসেবে ইন্দ্রকে বর্ণনা করা হয়েছে| এছাড়া ঋকবেদের যুগে ঝড়ের দেবতা মরুৎ, বাতাসের দেবতা বায়ু, ধ্বংসে দেবতা রুদ্র অথবা শিব প্রভৃতি কথা জানা যায়|
ঋকবেদের যুগে বরুণ ছিলেন যথেষ্ট মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত| শাস্তি প্রদানের অধিকর্তা ছিলেন বরুণ| বরুণ ছিলেন সমুদ্রের অধিপতি, বিশ্বের নিয়ম ও শৃঙ্খলা তার নির্দেশে পরিচালিত| ইন্দ্র, বরুণ, রুদ্র প্রভৃতি দেবতা ছাড়াও অগ্নি, সূর্য, ঊষা, বিষ্নু প্রভৃতি দেবতার কথা জানা যায়| ঋকবেদে অগ্নি দেবতাকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেওয়া হয়েছে| দ্বি-শতাধিক স্তোস্ত্র তার উদ্দেশ্যে নিবেদন করা হয়েছে| অগ্নি ছিলেন যজ্ঞের দেবতা| সূর্য, সাবিত্রী, ঊষা, পূষা হলেন সৌরমণ্ডলের দেবদেবী| সূর্য, স্বর্গ, পৃথিবী এবং অন্তরীক্ষকে আলোকিত করে, তিনি হলেন সমস্ত প্রাণশক্তি| পূষা হলেন পশুর রক্ষা এবং পুষ্টির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত দেবতা| প্রত্যুষের দেবী ছিলেন উষা|
পরবর্তীকালে ভারতে অন্যতম প্রধান দেবতা হিসেবে বিষ্ণু পরিগণিত হলেও ঋকবেদে তার স্থান ছিল গৌণ| কারণ এই গ্রন্থে তার সম্পর্কে খুব অল্পসংখ্যক স্তোস্ত্র ব্যয়িত হয়েছে| ঋকবেদে 6 টি মাত্র স্তোস্ত্র তার উদ্দেশ্যে নিবেদিত| ঋকবেদে বিষ্ণুকে সূর্যের এক বিশেষ সত্ত্বা রূপে কল্পনা করা হয়েছে|
ঋকবেদে আর্যদের মধ্যে এই ধারণা প্রতিভাত হয়েছে যে মৃত্যুর পর মানুষের সমস্ত ক্রিয়া-কলাপ শেষ হয়ে যায়, মৃত্যুর দেবতা যমের কাছে সে প্রেরিত হয়| সুতরাং মানুষের অমরত্ব লাভের প্রধান পথ হলো দেবতাদের পূজার্চনা এবং যজ্ঞানুষ্ঠান করা| যজ্ঞের মাধ্যমে এই সময় বিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে, এমন অলৌকিক ধারণা তাদের ছিল| এই যজ্ঞানুষ্ঠানের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল দেবতাদের সন্তোষ বিধান করা|
তবে এই যজ্ঞ ব্যক্তি বা পরিবার কেন্দ্রিক ছিল না, এই দিক থেকে বিচার করলে যজ্ঞের মধ্যে একটা সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়| যজ্ঞের ক্ষেত্রে বিরাজ করতেন পুরোহিতরা, আগুনে ঘৃতাহতির মাধ্যমে পুরোহিতরা যজ্ঞানুষ্ঠান করতেন| ঋকবেদে বহু দেবত্বের পাশাপাশি একেশ্বরবাদের সুর ধ্বনিত হয়েছে|
সে যুগের মানুষ প্রকৃতিকে পূজো করত| তাদের এই ধারণা বদ্ধমূল হয়েছিল যে, পার্থিব সমস্ত বিষয় বা বস্তুর পেছনে কোন অলৌকিক প্রাণের অস্তিত্ব আছে| তাই পার্থিব বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে তারা বিভিন্ন দেব-দেবীর ঘনিষ্ঠ সংযোগকে কল্পনা করে নিয়েছিল|
ইন্দ্র |
শিব |
আর্যরা বহু দেব-দেবীর অস্তিত্বে বিশ্বাসী ছিল| মাতৃ দেবতার পূজার ধারণা এই যুগে অনেকটা ম্লান হয়ে গিয়েছিল| এই সময় "দেব" পূজার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপিত হয়েছিল| ঋক বৈদিক যুগে আর্যদের সবচেয়ে জনপ্রিয় দেবতা ছিল ইন্দ্র| ঋকবেদের প্রায় 250 টি স্তোস্ত্র তার উদ্দেশ্যে নিবেদিত| বজ্র ও যুদ্ধ উভয় দেবতা হিসেবে ইন্দ্রকে বর্ণনা করা হয়েছে| এছাড়া ঋকবেদের যুগে ঝড়ের দেবতা মরুৎ, বাতাসের দেবতা বায়ু, ধ্বংসে দেবতা রুদ্র অথবা শিব প্রভৃতি কথা জানা যায়|
ঋকবেদের যুগে বরুণ ছিলেন যথেষ্ট মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত| শাস্তি প্রদানের অধিকর্তা ছিলেন বরুণ| বরুণ ছিলেন সমুদ্রের অধিপতি, বিশ্বের নিয়ম ও শৃঙ্খলা তার নির্দেশে পরিচালিত| ইন্দ্র, বরুণ, রুদ্র প্রভৃতি দেবতা ছাড়াও অগ্নি, সূর্য, ঊষা, বিষ্নু প্রভৃতি দেবতার কথা জানা যায়| ঋকবেদে অগ্নি দেবতাকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেওয়া হয়েছে| দ্বি-শতাধিক স্তোস্ত্র তার উদ্দেশ্যে নিবেদন করা হয়েছে| অগ্নি ছিলেন যজ্ঞের দেবতা| সূর্য, সাবিত্রী, ঊষা, পূষা হলেন সৌরমণ্ডলের দেবদেবী| সূর্য, স্বর্গ, পৃথিবী এবং অন্তরীক্ষকে আলোকিত করে, তিনি হলেন সমস্ত প্রাণশক্তি| পূষা হলেন পশুর রক্ষা এবং পুষ্টির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত দেবতা| প্রত্যুষের দেবী ছিলেন উষা|
পরবর্তীকালে ভারতে অন্যতম প্রধান দেবতা হিসেবে বিষ্ণু পরিগণিত হলেও ঋকবেদে তার স্থান ছিল গৌণ| কারণ এই গ্রন্থে তার সম্পর্কে খুব অল্পসংখ্যক স্তোস্ত্র ব্যয়িত হয়েছে| ঋকবেদে 6 টি মাত্র স্তোস্ত্র তার উদ্দেশ্যে নিবেদিত| ঋকবেদে বিষ্ণুকে সূর্যের এক বিশেষ সত্ত্বা রূপে কল্পনা করা হয়েছে|
ঋকবেদে আর্যদের মধ্যে এই ধারণা প্রতিভাত হয়েছে যে মৃত্যুর পর মানুষের সমস্ত ক্রিয়া-কলাপ শেষ হয়ে যায়, মৃত্যুর দেবতা যমের কাছে সে প্রেরিত হয়| সুতরাং মানুষের অমরত্ব লাভের প্রধান পথ হলো দেবতাদের পূজার্চনা এবং যজ্ঞানুষ্ঠান করা| যজ্ঞের মাধ্যমে এই সময় বিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে, এমন অলৌকিক ধারণা তাদের ছিল| এই যজ্ঞানুষ্ঠানের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল দেবতাদের সন্তোষ বিধান করা|
তবে এই যজ্ঞ ব্যক্তি বা পরিবার কেন্দ্রিক ছিল না, এই দিক থেকে বিচার করলে যজ্ঞের মধ্যে একটা সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়| যজ্ঞের ক্ষেত্রে বিরাজ করতেন পুরোহিতরা, আগুনে ঘৃতাহতির মাধ্যমে পুরোহিতরা যজ্ঞানুষ্ঠান করতেন| ঋকবেদে বহু দেবত্বের পাশাপাশি একেশ্বরবাদের সুর ধ্বনিত হয়েছে|
পরবর্তী বৈদিক যুগে ধর্মীয় ভাবনার পরিবর্তন
ধর্মীয় ক্ষেত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়| ঋকবেদের যুগে যুদ্ধের দেবতা ইন্দ্রের জনপ্রিয়তা ছিল সর্বাধিক, কিন্তু পরবর্তী যুগে ইন্দ্রের গুরুত্ব হ্রাস পেতে থাকে| ঊষা, অর্যমা, মার্তন্ড, দক্ষ ও পর্জন্যের মতো দেবতারা অদৃশ্য হয়ে যায়| এই সময় কিছু নতুন দেব-দেবীর আবির্ভাব ঘটে| এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন প্রজাপতি ব্রহ্মা, জয়ন্ত, কুবের, নারায়ণ, উমা প্রভৃতি|
প্রজাপতি ব্রহ্মা |
ঋক বৈদিক যুগে রুদ্র ও বিষ্নু ছিলেন গৌণ দেবতা, কিন্তু পরবর্তী বৈদিক যুগে তাদের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়, বিষ্নু ছিলেন পালনকর্তা| পরবর্তী বৈদিক যুগে অনার্যদের সঙ্গে সহাবস্থানের ফলে কিছু ধর্মীয় ধ্যান-ধারণার উদ্ভব ঘটে| অনার্যদের কাছ থেকে আর্যরা যাদু, ডাকিনী বিদ্যা প্রভৃতি গ্রহণ করেন| এছাড়া অনার্যদের মত আর্যরা সাপ, গাছ, পাথর ও অপ্সরাদের উপসনা শুরু করে|
পরবর্তী বৈদিক যুগে পুরোহিতদের মর্যাদা বেড়ে যায়| এই সময় 6 টি নতুন পুরোহিত সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে, ফলে পুরোহিত শ্রেণির সংখ্যা বেড়ে 16 টি হয় এবং এই যুগে একেশ্বরবাদী তত্ত্ব জনপ্রিয় হয়ে উঠে| ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয় এবং তিনি বহু দেবতার ভেতর দিয়ে ঈশ্বর বিভিন্ন রূপে প্রকাশিত হয়েছে| এই যুগে জন্মান্তরবাদ ও কর্মফলের বিকাশ ঘটে| আরণ্যক ও উপনিষদে এ কথা ব্যক্ত হয়েছে| মানুষ তার কৃতকর্ম অনুযায়ী ফল ভোগ করে, তাই মানুষ নিজেই নিজের ভাগ্য গড়ে তুলে|
পরবর্তী বৈদিক যুগে জড়বাদ প্রচলিত হয়েছে, ঋষি, উদ্দালক জড়বাদের কথা প্রচার করেছে| এরা বিশ্বাস করেন, দেহের বিনাশ এর সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সবকিছু শেষ হয়ে যায়, সুতরাং এই জীবনে যতখানি সম্ভব সুখ ভোগ করে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ| বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও পরবর্তী বৈদিক যুগে যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটে| গণিত, জ্যামিতি, চিকিৎসা শাস্ত্র, ভেষজ বিজ্ঞান প্রভৃতি এই সময় উন্নতি ঘটেছিল| আর্যদের সময় গণনা পদ্ধতি ছিল নিখুঁত|
আলোচনা থেকে আমরা ঋক বৈদিক এবং পরবর্তী বৈদিক যুগ মধ্যে তুলনা করে আমরা বলতে পারি যে, ধর্মীয় জীবন এবং আচার-আচরণের ক্ষেত্রে কিছুটা তারতম্য ঘটলেও ধর্মের মূল সুরের কোন পার্থক্য ঘটেনি| "ঈশ্বর এক ও অভিন্ন, বহু দেবতার মধ্য দিয়ে একের প্রকাশ"- এই ধারণা উভয় যুগের প্রচলিত ছিল|
পরবর্তী বৈদিক যুগে জড়বাদ প্রচলিত হয়েছে, ঋষি, উদ্দালক জড়বাদের কথা প্রচার করেছে| এরা বিশ্বাস করেন, দেহের বিনাশ এর সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সবকিছু শেষ হয়ে যায়, সুতরাং এই জীবনে যতখানি সম্ভব সুখ ভোগ করে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ| বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও পরবর্তী বৈদিক যুগে যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটে| গণিত, জ্যামিতি, চিকিৎসা শাস্ত্র, ভেষজ বিজ্ঞান প্রভৃতি এই সময় উন্নতি ঘটেছিল| আর্যদের সময় গণনা পদ্ধতি ছিল নিখুঁত|
আলোচনা থেকে আমরা ঋক বৈদিক এবং পরবর্তী বৈদিক যুগ মধ্যে তুলনা করে আমরা বলতে পারি যে, ধর্মীয় জীবন এবং আচার-আচরণের ক্ষেত্রে কিছুটা তারতম্য ঘটলেও ধর্মের মূল সুরের কোন পার্থক্য ঘটেনি| "ঈশ্বর এক ও অভিন্ন, বহু দেবতার মধ্য দিয়ে একের প্রকাশ"- এই ধারণা উভয় যুগের প্রচলিত ছিল|
তথ্যসূত্র
- সুনীল চট্টোপাধ্যায় "প্রাচীন ভারতের ইতিহাস" (প্রথম খন্ড)
- Poonam Dalal Dahiya, "Ancient and Medieval India"
- Upinder Singh, "A History of Ancient and Early Medieval India: From the Stone Age to the 12th Century"
সম্পর্কিত বিষয়
- প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য (আরো পড়ুন)
- বৈদিক এবং ঋক বৈদিক যুগে প্রশাসনিক ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
.......................................