ভারতে তুর্কি আক্রমণের প্রভাব

অধ্যাপক নিজাম এর মতে, উত্তর ভারতের ঘুরিদের সামরিক সাফল্যের ফলে এক বিরাট রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিবর্তন সূচনা হয়। ভারতে ছোট-বড় বহু রাজ্য ধ্বংসের ফলে রাজনৈতিক ঐক্যের পথ সুগম হয়।

ঐতিহাসিক যদুনাথের ভাষায়- বৈদিক যুগে বৃহত্তম এশিয়ার সঙ্গে ভারতের যে সম্পর্ক ও যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছিল, তুর্কিদের অভিযান ও তাদের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবার ফলে, বহিঃশত্রুর এর সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ স্থাপিত হয়।

ভারতে-তুর্কি-আক্রমণের-প্রভাব
অশ্বারোহী বাহিনী

ভারতে-তুর্কি-আক্রমণের-প্রভাব
পদাতিক বাহিনী


তুর্কি শাসন প্রতিষ্ঠা হবার পর কয়েক বছর ধরে মুসলিম নৃপতি ও হিন্দু নায়কদের মধ্যে সংঘর্ষ চলে এবং সেইসঙ্গে হিন্দুদের ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কার আন্দোলন চলে। তুর্কিদের অভিযানের ফলে ভারতে যে সামাজিক-অর্থনৈতিক বিপ্লবের সূচনা হয়, তার পটভূমি বহু শতাব্দীর পূর্বে রচিত হয়েছিল।

উত্তর ভারতে তুর্কি বিজয় ফলে নগর বিপ্লব সূচনা হয়। ফলে মজুর, শিল্পী প্রভৃতি নির্যাতিত শ্রেণী স্বেচ্ছায় নতুন তুর্কি সরকারে সেবায় নিযুক্ত হয়ে নতুন শহর ও নগরের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে থাকে। প্রকৃতপক্ষে এই শহরগুলি ছিল দিল্লির সুলতানদের প্রধান শক্তি।

ভারতীয় নৃপতিরা তাদের সামন্তদের কাছ থেকে সৈন্য সংগ্রহ করতেন এবং যুদ্ধের সময় নৃপতিরা সামন্তদের উপরেও একান্ত ভাবে নির্ভরশীল থাকতেন। তুর্কিরা সেই প্রথা অবসান ঘটিয়ে রাষ্ট্রের নিজস্ব সৈন্যবাহিনী গড়ে তুলার প্রচলন করেন। এই সৈন্যবাহিনী সংগ্রহ, রীতি, বেতন, তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রের হাতে ন্যস্ত থাকতো।

বহিঃবিশ্বের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ স্থাপিত হয় এবং নতুন নতুন শহর এর সৃষ্টি হলে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের পথ সুগম হয়। তুর্কি অভিযানের আরো একটি উল্লেখযোগ্য অবদান হল- প্রশাসনের ক্ষেত্রে ফরাসি ভাষার প্রবর্তন। ফরাসি ভাষার প্রবর্তনের ফলে প্রশাসনিক রাষ্ট্রের পথ সুগম হয়। পরবর্তীকালে এই ফরাসি ভাষাটি সর্বভারতীয় সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃত স্বীকৃতি পায়। সুতরাং এরফলে রাজনৈতিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক সকল ক্ষেত্রে ভারতের ইতিহাসে পরিবর্তনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে।

মুসলমান বিজয় ফলে ভারতের সামরিক সংগঠন ও যুদ্ধ রীতিতে পরিবর্তন আসে- একথা ঐতিহাসিক সত্য। এই বিজয়ের পূর্বে যুদ্ধক্ষেত্র কেবলমাত্র রাজপুত্র বা ক্ষত্রিয়দের একাধিপত্য ছিল এবং যুদ্ধ রীতি অবৈজ্ঞানিক এবং প্রাচীনপন্থী ছিল, কিন্তু তুর্কিরা কেবলমাত্র যোগ্যতা ও দক্ষতার স্বীকৃতি দিয়েছিল। পদাতিক বাহিনীর সংখ্যা কমিয়ে অশ্বারোহী বাহিনীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সুসজ্জিত যে কেন্দ্রীয় বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল, তা পরবর্তীকালে সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ এবং নিরাপত্তা বিধানে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। এই সৈন্যবাহিনীকে তুর্কি শাসকদের তরফ থেকে বহু সম্মান প্রদর্শন করা হলে সেনাবাহিনীও সম্রাটের বিশ্বাস অর্জন করে তুর্কি সাম্রাজ্যের মূল ভিত্তি গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিল। যে স্বপ্ন সম্পূর্ণটাও সত্যিই না হলেও কিছুটা হয়েছিল।



তথ্যসূত্র

  1. সুনীল চট্টোপাধ্যায়, "প্রাচীন ভারতের ইতিহাস"
  2. Ashok. K Banker, "Ashoka: Lion of Maurya".
  3. Wytze Keuning, "Ashoka the Great".

    সম্পর্কিত বিষয়

    1. চোল রাজ্যের প্রশাসনিক ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)
    2. জুনাগড় লিপি (আরো পড়ুন)
    3. কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রের গুরুত্ব (আরো পড়ুন)
    4. জৈন ধর্মের বৈশিষ্ট্য (আরো পড়ুন)
    সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
                       .......................................


      নবীনতর পূর্বতন
      👉 আমাদের WhatsApp Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
          
        
        👉 আমাদের WhatsApp Channel- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
        
      
      
        
      
         
      
          👉 আমাদের Facebook Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
        
      
      
        
      
         
        
        
          👉 আমাদের Facebook Page-ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
      
          👉আমাদের YouTube চ্যানেল - সাবস্ক্রাইব করুন 👍 
      
      
      
      
          
        
      
        
      
      

      টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য

      
      

      টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য


       


       




      
      

      👉নীচের ভিডিওটি ক্লিক করে জেনে নিন আমাদের ওয়েবসাইটের ইতিহাস এবং বিভিন্ন চাকুরী সম্পর্কিত পরিসেবাগুলি 📽️

      
      
      

      👉 জেনে আপনি আমাদের প্রয়োজনীয় পরিসেবা 📖

      👉ক্লিক করুন 🌐