এথেনীয় গণতন্ত্রের প্রকৃতি ও চরিত্র

প্রাচীন গ্রিসের ইতিহাসের নগর রাষ্ট্রগুলির মধ্যে শিক্ষা সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে অগ্রণী ছিল এথেন্স। প্রাচীন গ্রিসে এথেন্স যে সমস্ত কারণে গর্ব  বিশিষ্টতা অর্জন করেছে তার মধ্যে অন্যতম ছিল গণতান্ত্রিক আদর্শ। এথেনীয় গণতন্ত্র ছিল বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রায় ১৫০বছর ধরে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ নেতৃত্বের প্রচেষ্টায় এথেনীয়  গণতন্ত্র গড়ে ওঠে ।

এথেনীয় গণতন্ত্রের প্রকৃতি ও চরিত্র

এথেনীয় গণতন্ত্রের সূচনা করেন তিনি সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের সূচনা করেন, এজন্য তিনি সরকারি পদে অভিজাতদের একচেটিয়া অধিকারের অবসান ঘটান। এথেনীয়  গণপরিষদ একলেজিয়া খেটিসদের ভোটাধিকারের স্বীকৃতি দেয় এবং যুমামীদের  নিজের সম্পত্তির সম্প্রসারণকে সীমাবদ্ধ করে এর দ্বারা মাঝারি এবং ছোট কৃষকদের অধিকারকে অনেকটা নিরাপদ করেন।


সোলনের পরবর্তী সময়ে আর্থিক সাহায্য দিয়ে কৃষকদের অবস্থা আরো উন্নতি ঘটান। পিসিস ট্রাটাস  এই পরিবর্তনকে আরো অন্যতর করেন। ক্লিস থেেনিস তিনি নতুন সংবিধান রচনা করে একদিকে এক লেজিয়াকে সার্বভৌম প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন, সেই সঙ্গে গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য বাধ্যতামূলক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। এফিয়ালটিস আরিওপেসাস কাউন্সিলকে দুর্বল করেও একলেজিয়াকে শক্তিশালী করে গণতন্ত্রের পথ আরো প্রশস্ত করেন। সেই পথ ধরেই পেরিক্লিস এথেন্সের গণতান্ত্রিক ভিত্তিকে সুদূর ও শক্তিশালী করেন।


সোলন থেকে পেরিক্লিসের সময় পর্যন্ত যে পরিবর্তন এথেনীয় রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক ক্ষেতে ঘটেছিল যা একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হিসেবে পরিলক্ষিত হয়েছিল। তার বৈশিষ্ট্য গুলি হল নিম্নরূপ---

  1. রাজনীতি ও শাসনব্যবস্থার বিশেষজ্ঞদের তুলনায় সাধারণ মানুষের সমষ্টিগত বিচার বুদ্ধির উপর যথেষ্ট বিশ্বাস আস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়।
  2. শাসক নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের বেশিরভাগ পদে লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত হতো, তবে ১০ জন সেনাপতি উৎস শ্রেণী থেকে নির্বাচিত হতো।
  3. শাসন পরিচালনায় সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন গণপরিষদ একলেজিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এর বক্তব্য ও মতামত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হত।
  4. এথেনীয় জনগণের খরচ বহন করতে মূলত এথেনীয় বিশাল সাম্রাজ্যতা ছাড়া এথেন্স সেই করের বোঝা বহন করত। ধনি শ্রেণী দরিদ্র সাধারণ মানুষরা করভার থেকে মুক্ত ছিল।
  5. এথেনীয় গণতন্ত্রের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক ছিল নাগরিকদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে অভিন্নতা।
  6. সংগঠিত আমলাতন্ত্রের অনুপস্থিতি এথেনীয় গণতন্ত্রের আরেকটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।


এথেন্সের প্রচলিত ব্যবস্থার সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন আইনের চেক সমতা ব্যক্তি স্বাধীনতার মত গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য গুলি বিদ্যমান থাকলেও বেশ কিছু-অগণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য সুস্পষ্ট ভাবে লক্ষ্য করা গিয়েছিল। যেমন নারীদের ভোটারই অধিকারের কোন সুযোগ না থাকায় দাসপ্রথার উপস্থিতি বিদেশীদের নগরীকত্ব অর্জনের সুযোগ না দেওয়ায় মিত্র রাজ্যকে নিজের প্রয়োজনে বলা পূর্বক প্রধানত করে রাখার প্রবণতা নিজে বা দলীয় স্বার্থসিদ্ধিতে রাষ্ট্রযন্ত্রের ব্যবহার ও গুপ্ত হত্যা প্রভৃতি তাছাড়া এথেন্সের শাসন সাধারণের শাসন হলেও তা কখনো গ্রামের বা নিচু তলার মানুষদের আধিপত্য সূচিত করে না, মূলত অভিজাত ও বৃত্ত বানরায় প্রশাসনের মধ্যমণি ছিল। পেরিকক্লিসের আমলে তিনি স্বয়ং হয়ে উঠেছিলেন বীর নেতা এবং নেতা হিসেবে তার অধিপত্য কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, অর্থাৎ বীর পূজা ছিল এথেনীয় গণতন্ত্রের অন্যতম দিক। অনেক ঐতিহাসিক অবশ্য এসব বৈশিষ্ট্যকে অগণতান্ত্রিক আখ্যা দিতে রাজি নয়।


উইলিয়াম স্কার্ট হার্বুসন মনে করেন, এথেন্সের সাম্রাজ্যের অর্থ দিয়ে এই এথেন্সের গণতন্ত্র টিকে ছিল, অর্থাৎ গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য যে অর্থব্যয়ের প্রয়োজন ছিল তা পর রাজ্যের উপর অধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেই অর্জন করা সম্ভব ছিল। A .H .M.jones বলেন সাম্রাজ্যের পক্ষে লাভজনক ছিল কিন্তু চতুর্থ শতকের যখন সাম্রাজ্য টিকে ছিল না তখন কিন্তু এথেনীয় গণতন্ত্র বজাই ছিল।  তার মতে এথেন্স মেটিক বা বিদেশিদের নাগরিকত্ব না দেওয়া হলেও তাদের অবস্থা তেমন খারাপ ছিল না এবং এথেন্সের অর্থনৈতিক জীবন তাদের যথেষ্ট গুরুত্ব ছিল। দাসপ্রথা প্রসঙ্গে জোন্স বলেন এটি ছিল এথেনীয় গণতন্ত্রের প্রাণভোমরা কারণ দাস প্রথা ছিল বলে এথেন্সের নাগরিকরা নিশ্চিন্তে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের সমান ভাবে অংশগ্রহণের অবসান পেয়েছেন। আর নারীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন শুধু এথেন্সেই নয় বিংশ শতকের আগে ইংল্যান্ডের মতো গণতান্ত্রিক দেশেও নারীদের এই অধিকার দেওয়া হয়নি।


রবার্ট ম্যাকাভার মনে করেন, এথেনীয় গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক বেশ কয়েকটি উপাদান দিয়ে গঠিত দাস নির্ভর অর্থনীতির ছোট সুবিধাভোগী শ্রেণীদের সুযোগ সুবিধার সীমাবদ্ধতা জাতীয় চেতনার অভাব ও গণতন্ত্র সম্পর্কে তাত্ত্বিক ধ্যান ধারণার অনুপস্থিতি তাছাড়া বিচার ব্যবস্থা ও ত্রুটিযুক্ত ছিল না।


অজ্ঞ অশিক্ষিত উকিলের  বিচার প্রহসন ছাড়া কিছুই ছিল না, এমনকি মিত্র রাজ্যের ওপর এই বিচারালয় গুলি অকারনে অত্যাচার চালাতো। অর্থনৈতিক আষাম্ব বীর পূজা প্যারিক্লেস এর বন্ধনা এথেনীয় গণতন্ত্রকে দুর্বল করে দিয়েছিল, তাই এফ এরিয়া গণতন্ত্রকে অধিকতর স্বৈরাচার বলে অভিহিত করেছেন। 

 

কিছু ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা সত্বেও এথিডি ও গণতন্ত্র ছিল বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন গণতন্ত্র। এথেন্স তার জনগণকে অন্য যে কোন ব্যবস্থার থেকে অনেক বেশি সুযোগ দিয়েছিল নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের জন্য। বিতর্ক সভা আলোচনার উন্নত মান একলেজিয়ার শক্তিশালী ভূমিকা এথেনীয় গণতন্ত্রকে আধুনিক অনেক গণতান্ত্রিক দেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে দিয়েছিল, যদিও ভোটার নির্বাচকদের সংখ্যা ছিল ও তুলনায় অতি ক্ষুদ্র। ‌ ঐতিহাসিক ফিনলের মতে এথেন্স যে চরম গণতন্ত্র ছিল তা শিক্ষার অভাবে স্বৈরতন্ত্রের মতোই খারাপ ছিল। নানা তর্ক বিতর্কের মধ্যে ঐতিহাসিক হন ব্লোয়ার এর মতে, যতই দোষ ত্রুটি থাক এথেনীয় গণতন্ত্র এথেন্সের সাধারণ জনগণকে গোটা পঞ্চম শতকজুড়ে অভিজাতদের হাত থেকে রক্ষা করে শান্তির বার্তা বাহন দিয়েছিল। এথেন্সের গণতন্ত্রের ভিত্তি ছিল প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র যুগোপযোগী গণতন্ত্র, এই মুক্ত গণতান্ত্রিক আবহ তাই সেখানে সৃষ্টি করেছিল এক সাংস্কৃতিক বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি বিদ্যার উন্মেষের পরিমণ্ডল।

............. সমাপ্তি...........


✍️লেখিকা পরিচিতি

নাম- জিয়াসমিন খাতুন
কলেজ - পাঁশকুরা বনমালী কলেজ
ইউনিভার্সিটি - বিদ্যাসাগর ইউনিভার্সিটি


👉তথ্যসূত্র

  1. Pavneet Singh, "International Relations ".
  2. Prakash Chandra, "international relations & comparative politics".
  3. Garrett W Brown, "The Concise Oxford Dictionary of Politics and International Relations ".

📜সম্পর্কিত বিষয়

  1. ওপেক কি ? | What is OPEC ? (আরো পড়ুন)
  2. সার্কের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য (আরো পড়ুন)
  3. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জার্মানির বিভাজন তথা বিশ্ব রাজনীতিতে তার প্রভাব  (আরো পড়ুন)
  4. ইতালিতে ফ্যাসিবাদের উত্থানের কারণ  (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো। আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন।
                     .......................................

    নবীনতর পূর্বতন
    👉 আমাদের WhatsApp Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
    
        
      
      👉 আমাদের WhatsApp Channel- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
    
    
      
    
       
    
        👉 আমাদের Facebook Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
    
    
      
    
       
      
      
        👉 আমাদের Facebook Page-ক্লিক করুন 🙋‍♂️
    
    
        👉আমাদের YouTube চ্যানেল - সাবস্ক্রাইব করুন 👍 
    
    
    
    
        
      
    
      
    
    

    টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য

    
    

    টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য


     


     




    
    

    👉নীচের ভিডিওটি ক্লিক করে জেনে নিন আমাদের ওয়েবসাইটের ইতিহাস এবং বিভিন্ন চাকুরী সম্পর্কিত পরিসেবাগুলি 📽️

    
    
    

    👉 জেনে আপনি আমাদের প্রয়োজনীয় পরিসেবা 📖

    👉ক্লিক করুন 🌐