মাদার টেরিজা জীবনী

তাঁর স্থাপিত অসংখ্য প্রতিষ্ঠান আজও একইভাবে কাজ করে যাচ্ছেন| সারা বিশ্বের অসংখ্য মানুষ আজও তাঁর নাম স্মরণ করেন, তিনি হলেন বিশ্ব জননী মাদার টেরিজা| আমাদের ভাবতে ভালো লাগে, জন্মসূত্রে ভারতীয় না হলেও তিনি ভারতকে খুব ভালোবাসতেন|  তবে অবশ্য পরে তিনি বাবার পদবী পরিত্যাগ করে ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছিলেন এবং তিনি পুরোপুরি ভাবে ভারতীয় হয়েছিলেন| তাঁর বেশিরভাগ কর্মজীবন কলকাতার বুকের উপর কেটেছিল এবং এই শহরটি সাথে তাঁর খুব ভালো সম্পর্ক ছিল|
বিশ্ব_জননী_মাদার_টেরিজা

বিশ্ব জননী মাদার টেরিজা



জন্ম

তিনি 1910 খ্রিস্টাব্দে 26 আগস্ট যুগোস্লাভিয়ার একটি ছোট শহর স্কোপজে জন্মগ্রহণ করেন এবং তাঁর বাবা  নাম দিয়েছিলেন অ্যাগনেস গোনস্কা বোজাস্কিয়ু|তাঁর বাবা  নাম ছিল নিকোলাস এবং তিনি যথেষ্ট দয়ালু এবং দানশীল ব্যক্তি ছিলেন ও তিনি একজন কন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করতেন| আবার নিকোলাস নগর পরিষদের সম্মানিত সদস্য হয়েছিলেন এবং তিনি বেশ কয়েকটি ভাষা জানতেন| অ্যাগনেসের মায়ের নাম ছিল ব্যানাফিল ড্রানাই এবং তিনি ভেনিসের মেয়ে ছিলেন|

ছোটবেলার কথা

এক ভাই, এক বোন এবং বাবা-মাকে নিয়ে অ্যাগনেসের সুখের সংসার ছিল| তিন ভাইবোন মিলে সকাল থেকে ছোটোছুটি, খেলাধুলা এবং নানা রকমের দুষ্টুমি করত, তবে তার সাথে সাথে তাঁরা মন দিয়ে পড়াশোনা করতেন| অ্যাগনেসের মা এক ধর্মপ্রাণা মহিলা ছিলেন এবং তিনি সবাইকে সৎপথে চলার কথা বলতেন, তাঁর মায়ের কাছ থেকে তিনি এইসব গুণ গ্রহণ করেছিলেন|

তবে আর বেশি দিন অ্যাগনেসের সুখের সংসার ছিল না| 1917 খ্রিস্টাব্দের তাঁর বাবা মারা গেল এবং তার সংসার দুঃখের ছায়া নেমে এলো এবং তাঁর মা এই শোকে অসুস্থ হয়ে পড়লেন| তারপর তাঁর মা কিছুদিন পর মনকে শক্ত করলেন এবং তিনি সংসারের দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিল| তিনি একটি ছোট ব্যবসা শুরু করলেন, কিন্তু সেখানেও অঘটন ঘটল, সেই ব্যবসার এক অংশীদার সব মূলধন নিয়ে পালিয়ে গেলে|

তবে এর পাশাপাশি ছোট ভাইবোনদের পড়াশোনা কাজ চলতে থাকে, তারা সেকেন্ড হার্ট স্কুলে পড়াশোনা করতেন এবং অ্যাগনেস তাঁর মাকে সংসারের কাজে সাহায্য করত| তারপর ওই স্কুল থেকে অ্যাগনেসকে সরকারি স্কুলে আসতে হল এবং সেখানে তিনি মিশনারিদের মুখে ভারতের দুঃখ-কষ্টের কথা শুনলেন, তখন থেকে তিনি ভারত সহানুভূতি সম্পূর্ণ হয়ে উঠলেন| তারপর তিনি আবেগ মনে স্থির করলেন, "তাঁকে সন্ন্যাসী গ্রহণ করে ভারতে আসতে হবে "|

স্বদেশ ভূমি ত্যাগ


1928 খ্রিস্টাব্দে 26 শে সেপ্টেম্বর তিনি স্বদেশভূমিকে চির বিদায় জানিয়ে কলকাতায় এলেন, এখানে তিনি সেন্ট মেরি স্কুলে শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দিলেন| এখানে তিনি দীর্ঘ 18 বছর ভূগোল পড়িয়েছিলেন| "ইতিমধ্যে তিনি ফরাসি সন্ন্যাসী তোরস মাতাকে স্মরণ করে নতুন নাম নিয়েছিলেন সিস্টার টেরিজা"|

তিনি একজন সন্ন্যাসী ছিলেন, তাঁকে কোন কিছু করার আগে রোমের পোপের কাছে অনুমতি নিতে হতো, তাই তিনি আবেদন করলেন এবং শুরু হলো তাঁর প্রতীক্ষার দিন| তারপর 1948 খ্রিস্টাব্দে 12 ই এপ্রিল অনুমতি পাওয়া গেল এবং তিনি লরেটার দামি পোশাক পরিত্যাগ করে ভারতীয় নারীর পোশাক পরিধান করলেন| তিনি নীল পাড়ের সাদা শাড়ি উপর সযত্নে গেঁথে দিলেন ক্রস চিহ্ন| এবার তিনি নার্সের ট্রেনিং নেওয়ার জন্য পাটনা শহরে গেলেন, সেখানেই তিনি আমেরিকার মেডিকেল মিশনারি সিস্টারদের সাথে মিশে নার্সের ট্রেনিং নিলেন| নার্সের ট্রেনিং নেয়ার পর, তিনি কলকাতায় এসে সেন্ট জোসেফ হোমে আশ্রয় নিলেন|

তারপর তিনি মতিঝিল বস্তিতে গেলেন , সেখানে তিনি একটা স্কুল স্থাপন করলেন| স্কুল বলতে ছিল , সবুজ ঘাসের উপর কোনরকম একটা চালা তৈরি করা হয়েছে, সেখানে বাচ্চারা পড়াশোনা করত এবং তিনি বাচ্চাদের সরু কাঠি দিয়ে মাটিতে বাংলা এবং ইংরেজি অক্ষর শেখাতেন| তারপর পাক স্ট্রিটের এক পাদরি নিজের পকেট থেকে তাঁকে 100 টাকা দিলেন এবং এই টাকা নিয়ে তিনি এক মাদার ডিসপেন্সারি খুললেন| শেষ পর্যন্ত এই মাদার সংগঠনটি পোপের অনুমোদন পেল| তবে এই মাদার সংগঠন জন্য প্রয়োজন ছিল একটি বাড়ি, তারপর 1953 খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে মিশনারিজ অফ চ্যারিটি নামে তাঁর সংস্থা উঠে এলো মাতৃভবনে|

কর্ম ব্যস্ততার জীবন

শুরু হলো তাঁর কর্ম ব্যস্ততার জীবন| তিনি সারাদিন ধরে পথে-প্রান্তরে যাযাবরের মত ঘুরে বেড়াতেন|দেখতেন কোথাও কোন অনাথ শিশুর শুয়ে আছে কিনা, কোথাও কোন নবজাতিকার কান্না শোনা যাচ্ছে কিনা| এভাবে একদিন রাস্তায় তিনি দেখলেন, একটি লোক মরে পড়ে আছে এবং মাদারের কোমল মনে এ ঘটনাটি আঘাত করল| তিনি ভাবলেন, মরণাপন্ন মানুষের জন্য একটি আশ্রয়স্থল তৈরি করতে হবে, এজন্য তিনি কালীঘাটে একটি জায়গা পেল এবং 1952 খ্রিস্টাব্দে 22শে আগস্ট সেখানে তৈরি হয় হলো নির্মল হৃদয়|

তৎকালীন সময়ে কুষ্ঠ রোগকে ভগবানের অভিশাপ বলে মনে করত, তাই কুষ্ঠ রোগীদের দীর্ঘদিন ধরে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোন রকম বেঁচে থাকতে হত| মাদার এই কুষ্ঠ রোগীদের দুঃখ কষ্টের কথা অনুভব করলেন, মূলত তারই প্রচেষ্টায় কুষ্ঠ রোগীদের জন্য একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হলো| কুষ্ঠ রোগীরা যাতে আবার সমাজের মূলস্রোতে আসতে পারে সেদিকেও নজর ছিল| এই জন্য তিনি একাধিক পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন| 1958 খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত হলো গান্ধী প্রেম নিভাস, বর্তমানে এটি ভারতের অন্যতম সেরা সেবা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে| তিনি দেশ-বিদেশে বিভিন্ন সেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন|

মিশনারিজ অফ চ্যারিটি এখন এক আন্তর্জাতিক সেবা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে, দেশ-বিদেশের অনেক তরুণী এই প্রতিষ্ঠানের সিস্টার হওয়ার জন্য আবেদন করেছিল|  মাদারের কাজে একেবারে অন্যরকম ছিল, তিনি সারাদিন ধরে কঠোর পরিশ্রম করতেন এবং গভীর আজ পর্যন্ত তিনি চিঠির উত্তর দেবার চেষ্টা করতেন এবং চিঠির মধ্যে কারো কোন অনুরোধ থাকলে, তা তিনি পূরণ করার চেষ্টা করতেন|

ইতিমধ্যে মাদার সংগঠনের বিভিন্ন শাখা বিভিন্ন জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে, যেমন- মুম্বাই, আগ্রা প্রভৃতি| 1991 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দেশ-বিদেশে এই সংগঠনের মোট 168 টি শাখা স্থাপিত হয়েছিল|

তারপর তিনি ভেনেজুয়েলা, অস্ট্রেলিয়া, প্রভৃতি জায়গায় জায়গায় স্থাপন করেন| এইভাবে মাদার সংগঠনটি একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনে স্বীকৃতি লাভ করেছিল| মাদারের বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের জন্য তাঁকে বিভিন্ন সমান দ্বারা সম্মানিত করা হয়েছিল, যেমন- 1966 খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী উপাধি দ্বারা ভূষিত করেন, তারপর 1971 খ্রিস্টাব্দে পোপ জন ত্রয়োদশ পল তাঁকে শান্তি পুরস্কার  দিলেন এবং সেই বছরই তিনি নিউ ইয়কের গুড স্যামারিটন পুরস্কার পেলেন, 1979 খ্রিস্টাব্দে শান্তির জন্য তিনি নোবেল পুরস্কার পেলেন প্রভৃতি|

তাঁর এই দীর্ঘ ব্যস্ততা জীবনে বিভিন্ন মহামনীষীদের সংস্পর্শ এসেছিল, যেমন ডঃ বিধান চন্দ্র রায়ের সঙ্গে তাঁর খুব ভালো সম্পর্ক ছিল, তারপর জওহরলাল নেহেরু ও ইন্দ্রাগান্ধির সঙ্গে খুব ভালো পরিচিত ছিল, তারপরে স্পেনের রাজা, ভেনিজুয়েলার রাজা প্রভৃতি সকলের সাথে তাঁর খুব ভালো সম্পর্ক ছিল|

পরলোক গমন

এখন তার স্বাস্থ্য ভেঙ্গে গেছে, কিন্তু কাজের বিরাম নেই| তিনি 1984 খ্রিস্টাব্দে অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবং তাঁর বুকে পেসমেকার বসানো হলো| তারপর সুস্থ হওয়ার পর তিনি আবার ছুটলেন বিশ্বের নানা প্রান্তে, কিন্তু এবার তাঁর মৃত্যু ঘনিয়ে এসেছিল এবং তিনি 1997 খ্রিস্টাব্দের 6 সেপ্টেম্বর 86 বছর বয়সে পরলোক গমন করেন| তাঁর শোকে বিহ্বল হয়ে প্রায় প্রত্যেকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান কলকাতা শহরে এসেছিল এবং এমন ঐতিহাসিক শোক শোভাযাত্রা কলকাতা শহরটি আর কোনদিন দেখিনি|

পৃথিবী যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন বিশ্বজননী মাদার টেরিজা আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবে|

                  ...................................

নবীনতর পূর্বতন
👉 আমাদের WhatsApp Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️

    
  
  👉 আমাদের WhatsApp Channel- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
  


  

   

    👉 আমাদের Facebook Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
  


  

   
  
  
    👉 আমাদের Facebook Page-ক্লিক করুন 🙋‍♂️

    👉আমাদের YouTube চ্যানেল - সাবস্ক্রাইব করুন 👍 


    
  

  

টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য


টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য


 


 





👉নীচের ভিডিওটি ক্লিক করে জেনে নিন আমাদের ওয়েবসাইটের ইতিহাস এবং বিভিন্ন চাকুরী সম্পর্কিত পরিসেবাগুলি 📽️



👉 জেনে আপনি আমাদের প্রয়োজনীয় পরিসেবা 📖

👉ক্লিক করুন 🌐