উমাইয়া খিলাফতের পতনের কারণ

উমাইয়া বংশের পতনের কারণ

৬৬১ খ্রিস্টাব্দে মুয়াবিয়া খলিফা পদে অধিষ্ঠিত হলে উমাইয়া খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়। তাঁর আমলে ইসলামীয় খলিফা রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। পরবর্তীকালে আব্দ-অল মালিক এবং অল ওয়ালিদের সময়কালে খলিফা সাম্রাজ্যের ভিত্তি শ্রদ্ধা ও বিস্তৃত হয়। কিন্তু খলিফা ইসলামের সময়কাল থেকে উমাইয়া খিলাফতের অবক্ষয় শুরু হয়। এবং খলিফার দ্বিতীয় মারওয়ানের সময় উমাইয়া খলিফা সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। কালের নিয়মে এই সাম্রাজ্যের পতনের পেছনে কিছু সাধারন কারণ ও কিছু বিশেষ ধরনের কারণ পতনের জন্য দায়ী ছিল।

উমাইয়া খলিফাদের পতন
উমাইয়া শাসনকালে
Source- click here 


👉উত্তরাধিকারীদের অযোগ্যতা

উমাইয়া বংশের ১৪ জন খলিফার মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন অযোগ্য ও দুর্বল। ঈশাম ছিলেন উমাইয়া বংশের শেষ শক্তিশালী খলিফা। আর পরবর্তী খলিফা গণ ছিলেন বিলাসপুরিয় অযোগ্য। সেই সঙ্গে তাদের নৈতিক চরিত্রের অবক্ষয় ঘটে। তার ব্যক্তিগত দুর্বলতা অযোগ্যতা ও আরম্ভ অযোগ্যতা খলিফা তন্ত্রের ভিত্তিকে দুর্বল করে দেয়।


👉উপজাতীয় চরিত্র ও বিচ্ছিন্নতাবাদ

ইসলামীয় ঐক্যের আদর্শ আরব জাতির মধ্যে সংহতি এনেছিল ঐক্যবোধ ও সংহতি থেকেই আরবে তৈরি হয়েছিল ইসলামীয় রাষ্ট্র। খলিফা মুয়াবিয়া ইসলামিয় ঐক্যের পরিবর্তে গোত্র কৌলিন্যকে প্রাধান্য দেন। শাসন ব্যবস্থা ইসলামের মৌলিক আদর্শচ্যুত হয়। গোত্র নির্ভর আরব উপজাতীয় চরিত্রের তরুণ ইসলামী ও বন্ধন শিথিল হয়ে পড়ে। আরবের বিভিন্ন উপজাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। মুয়াবিয়া ইয়া মানিওদের সহায়তায় সিরিয়ার ক্ষমতায় বসলে কারিসপন্থী ও ইয়া মানিয়দের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। মুয়াবিয়ার পরবর্তীকালে খলিফা গণ নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করতে না পারলে আরও ভূখণ্ডে বিচ্ছিন্ন মনোভাব মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে এবং বিভিন্ন উপজাতিগোষ্ঠীর মধ্যে আরব ভূখণ্ডে বিচ্ছিন্ন হয়, বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন উপজাতি গোষ্ঠীর শক্তিশালী হয়ে ওঠে তাদের মধ্যে নিরত্তর সংঘর্ষ উমাইয়া সাম্রাজ্যের বৃত্তিকে দুর্বল করে দেয়।


👉উত্তরাধিকার সংকট

সংঘর্ষ

উমাইয়া খিলাফতে উত্তরাধিকারী মনোনয়নের ক্ষেত্রে কোনো নীতি ছিল না। উমাইয়া খলিফা গণ নিজেও মনোনীত ব্যক্তিকে উত্তরাধিকারী মনোনয়ন করতেন খলীফাদের নিজস্ব মনোনয়ন অনেক সময় সকলের বৈধতা পেত না। আবার অনেক সময় বৈধ উত্তরাধিকারীকে সরিয়ে অন্য কেউ ক্ষমতা লাভ করত, এর ফলে উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে বিবাদ ও সংঘর্ষ লেগে থাকত। এভাবে খলিফা পদের মূল্য শাসক ও উচ্চপদস্থ কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের মধ্যে অন্তর্দন্দ্ব উমাইয়া খলিফা তন্ত্রকে দুর্বল করে দেয়।


👉খলীফাদের বৈষম্য মূলক নীতি

উমাইয়া বলে সাম্রাজ্যের বিস্তারের ফলে আরবরা এক বিরাট অঞ্চল তাদের নিজস্ব অধিকার নিয়ে আসেন। ফলে বিজিত অঞ্চলে আমলে আরব শাসনব্যবস্থা কিন্তু বিজিত অঞ্চলে জনগণ অন্যান্য আরবদের মতো বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ার ফলে তারা উমাইয়া সাম্রাজ্য দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিককে পরিণত হয়, এই জন্য খারিজী, মাওয়ালী, পারস্য বাসিরা উমাইয়া শাসনের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।


👉ধর্মের বদলে রাষ্ট্রীয় ঐক্যের গুরুত্ব দান

আব্দুল আজিজ ছাড়াও সকল খলিফায় ধর্মের পরিবর্তে রাষ্ট্রীয় ঐক্যের উপর অধিক গুরুত্ব দান করেন, এর ফলে গোড়া ইসলামিক ধার্মিকরা শিয়া সম্প্রদায়, খারেজি সম্প্রদায় উমাইয়া শাসকদের ধর্ম বিরোধী বলে মনে করেন। উমাইয়া শাসকদের বিরুদ্ধে অকারনে তারা মনে করে উমাইয়া শাসকরা কোরআনের বিধি নিষেধ শিয়াদের কাছে উমাইয়ারা ছিল দখলদার। সুতরাং শাসনের রাষ্ট্রীয় ঐক্য প্রচেষ্টাকে তারা বুঝতে চাইনি। এবং তারা উমাইয়াদের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হয়। এইভাবে খারিজিদের বিদ্রোহ কুফা ও খোঁরাসানের উমাইয়া বিরোধী আন্দোলন প্রবল হয়ে সাম্রাজ্যের পতনকে ত্বরান্বিত করে।


👉হিমাইয়া ও মুদাবিয়ার দ্বন্দ্ব

ইসলাম পূর্ব সময়কাল থেকে আরবে শিমাইয়া ও মুরারিয়া সম্প্রদায়ের দ্বন্দ্ব হযরত মুহাম্মদ উদার ও শক্তির বাণী সেই দ্বন্দ্বকে সাময়িকভাবে প্রশমিত হলেও খলিফা মুয়াবিয়ার নিজ স্বার্থে সেই দন্দ্বকে প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন, এর ফলে হিমাইয়া ও মুদারিয়া দ্বন্দ্ব সাম্রাজ্যের শান্তি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে অরাজকতার সৃষ্টি করে। যা উমাইয়া সাম্রাজ্যের পতনের পথ প্রশস্ত করে ।


📖 মূল্যায়ন / উমাইয়া বংশের পতনের ফলাফল

বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সংকটের পাশাপাশি মন্ত্রীদের স্বার্থপরতা সেনাবাহিনীর বিশ্বাসঘাতকতা এবং সাম্রাজ্যের মধ্যে অন্ধ উমাইয়া শাসনকে একেবারে দুর্বল করে দেয়। সেই সুযোগে জাসিমের বংশধর আব্বাসীয়দের উমাইয়া বিরোধিতা করে বিদ্রোহ শুরু করে। আব্বাসীয়রা সিয়া আলির সমর্থক ও খারিজীয়দের সঙ্গে মিলিত হয়ে উমাইয়াদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। জাবের যুদ্ধে তাদের সম্মিলিত বাহিনীর কাছে উমাইয়া সৈন্য বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়। এরপর উমাইয়া বংশের শেষ খলিফা দ্বিতীয় মারওয়ানকে হত্যা করে(৭৫০খ্রীঃ) অল আব্বাস আরবে আব্বাসীয় খিলাফত প্রতিষ্ঠা করেন, এভাবেই উমাইয়া খিলাফতের অবলুপ্তি ঘটে।

............. সমাপ্তি...........


✍️লেখিকা পরিচিতি

নাম- জিয়াসমিন খাতুন
কলেজ - পাঁশকুরা বনমালী কলেজ
ইউনিভার্সিটি - বিদ্যাসাগর ইউনিভার্সিটি


👉তথ্যসূত্র

  1. Pavneet Singh, "International Relations ".
  2. Prakash Chandra, "international relations & comparative politics".
  3. Garrett W Brown, "The Concise Oxford Dictionary of Politics and International Relations ".

📜সম্পর্কিত বিষয়

  1. ওপেক কি ? | What is OPEC ? (আরো পড়ুন)
  2. সার্কের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য (আরো পড়ুন)
  3. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জার্মানির বিভাজন তথা বিশ্ব রাজনীতিতে তার প্রভাব  (আরো পড়ুন)
  4. ইতালিতে ফ্যাসিবাদের উত্থানের কারণ  (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো। আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন।
                     .......................................

    নবীনতর পূর্বতন
    👉 আমাদের WhatsApp Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
    
        
      
      👉 আমাদের WhatsApp Channel- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
    
    
      
    
       
    
        👉 আমাদের Facebook Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
    
    
      
    
       
      
      
        👉 আমাদের Facebook Page-ক্লিক করুন 🙋‍♂️
    
    
        👉আমাদের YouTube চ্যানেল - সাবস্ক্রাইব করুন 👍 
    
    
    
    
        
      
    
      
    
    

    টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য

    
    

    টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য


     


     




    
    

    👉নীচের ভিডিওটি ক্লিক করে জেনে নিন আমাদের ওয়েবসাইটের ইতিহাস এবং বিভিন্ন চাকুরী সম্পর্কিত পরিসেবাগুলি 📽️

    
    
    

    👉 জেনে আপনি আমাদের প্রয়োজনীয় পরিসেবা 📖

    👉ক্লিক করুন 🌐