মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কারণ । এই সাম্রাজ্যের পতনের জন্য সম্রাট অশোককে কতখানি দায়ী করা যায়

নন্দ বংশের পতনের পর প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে যে রাজবংশের সূচনা হয় তা ছিল মৌর্য বংশ। মৌর্য বংশের শাসকদের সুযোগ্য নেতৃত্বে এই বংশের রাজ্যসীমা মগধকে কেন্দ্র করে এক সুবিশাল রূপ লাভ করে। 

কিন্তু এই বংশের শক্তিশালী সম্রাট অশোকের মৃত্যুর ৫০ বছরের মধ্যেই এই সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যায়। অবশ্য এই সাম্রাজ্যের পতন কোন আকস্মিক ঘটনা ছিল না বা কোন একটি কারণে হয়নি। পতনের জন্য দায়ী কারণগুলি ছিল এই রকম- 

মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কারণ । এই সাম্রাজ্যের পতনের জন্য সম্রাট অশোককে কতখানি দায়ী করা যায়


👉 ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের বিরোধিতা 

মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কারণ । এই সাম্রাজ্যের পতনের জন্য সম্রাট অশোককে কতখানি দায়ী করা যায়

মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের অন্যতম কারণ ছিল ব্রাহ্মণ বিদ্রোহ যা অধিকাংশ ঐতিহাসিক মেনেও নিয়েছেন। যেমন পন্ডিত হরপ্রসাদ শাস্তির মতে- অশোকের প্রতি ব্রাহ্মণ শ্রেণীর বিদ্রোহ মৌর্য সাম্রাজ্যকে পতনের দিকে নিয়ে গিয়েছিল।

তিনি আরো বলেছেন- সমকালীন সময় সম্রাট অশোকের পশু বলি নিষিদ্ধকরণ, দন্ডসমতা, ব্যবহার সমতার প্রয়োগ, ধর্ম মহাপাত্র নামক কর্মচারী নিয়োগ ব্রাহ্মণদের মর্যাদা ক্ষুন্ন করেছিল। এগুলি মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের ব্রাহ্মণ বিদ্রোহের জন্য দায় বলা চলে।


👉 সাম্রাজ্যের বিশালতা

মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের উপর একটি কারণ ছিল সাম্রাজ্যের বিশালতা। বিশেষ করে অশোক পরবর্তী সম্রাটগণ সুবিশাল মৌজ্য সাম্রাজ্যকে সার্বিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। সেই কারণে অল্প সময়েই মৌর্য সাম্রাজ্য পতনের দিকে চলে যায়।


👉 প্রশাসনিক দুর্বলতা

মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কারণ । এই সাম্রাজ্যের পতনের জন্য সম্রাট অশোককে কতখানি দায়ী করা যায়

সুবিশাল মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক ব্যবস্থা সবসময়ই সমান ছিল না। বিশেষ করে শেষের দিকে মৌর্য প্রশাসন দুর্বল হতে শুরু করে। অনেক ক্ষেত্রেই দক্ষ কর্মচারীর অভাব দেখা দেয়। একই আঞ্চলিক সামাজিক গোষ্ঠী থেকে কর্মচারী নিয়োগ করার ফলে আঞ্চলিক প্রশাসনগুলি বিভিন্ন গোষ্ঠীর দখলে চলে যায় যা মৌর্য শাসনের পতন ডেকে আনে।


👉 প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের অত্যাচার

মৌর্য রাজতন্ত্র শাসিত রাজ্যের স্থায়িত্ব নির্ভর করত রাজা বা সম্রাট- এই ব্যক্তিত্বের উপর। শাসন সংক্রান্ত ব্যাপারে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করায় প্রদেশগুলিতে প্রাদেশিক শাসকরা সাম্রাজ্যের সঙ্গে বন্ধন ছিন্ন করে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।


👉 স্বতন্ত্র জাতিগুলির বিদ্রোহ

নীতিগতভাবে সম্রাট অশোক সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত স্বতন্ত্র উপজাতিগুলি স্বতন্ত্র ও সমতা স্বীকার করেছিলেন। এদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব স্বীকার করেছিলেন। শাসিত জাতিগুলির মধ্যে ছিল অন্ধ্র, পুলিন্দ, কম্বোজ, রাষ্ট্রিক, ভোজ ও চোল।


👉 পরবর্তী সম্রাটদের অযোগ্যতা

মৌর্য সম্রাটগণের অযোগ্যতা ও মৌর্যদের পতনের বিশেষভাবে দায়ী ছিল। বিশেষ করে অশোকের মৃত্যুর পর মৌর্য সাম্রাজ্যের দ্রুত পতন শুরু হয় যা রোধ করার মত যোগ্যতা এই সম্রাটগণের ছিল না। ফলে মৌর্য সাম্রাজ্যের পতন হয়েছিল বলে মনে করা হয়

 

👉 অর্থনৈতিক অবনতি 

অর্থনৈতিক অবনতি মৌর্য সাম্রাজ্যের দ্রুত পতনের অন্যতম কারণ। যেমন সুবিচার সামরিক বাহিনীর ভরণপোষণ, তাদের সঠিক সময় বেতন প্রদান, বসতি স্থাপনের সাহায্য প্রভৃতি কারণে যে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন ছিল তা দিয়ে অর্থনৈতিক ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ে। এই আর্থিক চাপও মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের জন্য বলে মনে করা হয়।


👉 সম্রাট অশোকের দায়িত্ব 

মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কারণ । এই সাম্রাজ্যের পতনের জন্য সম্রাট অশোককে কতখানি দায়ী করা যায়

মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের জন্য সম্রাট অশোককে দায়িত্বকে কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না। তিনি যুদ্ধনীতি পরিত্যাগ করে ধর্ম প্রবর্তনের যে নীতি গ্রহণ করেন তাতে মৌর্য সামরিক শক্তি কমাগত দুর্বল হয়ে পড়ে। ড. হেমচন্দ্র রায় চৌধুরী প্রমুখ ঐতিহাসিকগণ সম্রাট অশোকের অহিংস নীতি গ্রহণ করে বিহারযাত্রাকে ধর্মযাত্রায় পরিণত করেন এবং ভেরীঘোষকে ধর্মঘোষ- এ পরিণত করেন। তাঁর সামরিক বাহিনী প্রায় অকেজো হয়ে ওঠে এবং সাম্রাজ্যের শৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে যায়। জনগণের উপর অত্যাচারের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং জনগণ বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।


📖 মূল্যায়ন

তাত্ত্বিক দিক থেকে বিচার করে মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের জন্য সম্রাট অশোককে দায়ী করা হলেও তাঁর অহিংসার আদর্শই যে সাম্রাজ্যের পতনের জন্য দায়ী একথা বলা যায় না। সম্রাট অশোক এর ধর্মবিজয় নীতি আংশিকভাবে এই সাম্রাজ্যের পতনের জন্য দায়ী হলেও একথা অস্বীকার করা যায় না রে তিনি পিতামহের দিগ্বিজয় নীতি অনুসরণ করে চললেও কোন না কোন সময় এই সাম্রাজ্যের পতন অবশ্যই হতো।


📜তথ্যসূত্র

  1. সুনীল চট্টোপাধ্যায় "প্রাচীন ভারতের ইতিহাস" (প্রথম খন্ড)।
  2. Poonam Dalal Dahiya, "Ancient and Medieval India".
  3. Upinder Singh, "A History of Ancient and Early Medieval India: From the Stone Age to the 12th Century".

📖সম্পর্কিত বিষয়

  1. ঋক বৈদিক যুগ এবং পরবর্তী বৈদিক যুগের ধর্মীয় ভাবনা (আরো পড়ুন)।
  2. বৈদিক এবং ঋক বৈদিক যুগে প্রশাসনিক ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)।
  3. প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য  (আরো পড়ুন)।
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো। আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন    
                .................🙏......................



নবীনতর পূর্বতন
👉 আমাদের WhatsApp Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️

    
  
  👉 আমাদের WhatsApp Channel- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
  


  

   

    👉 আমাদের Facebook Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
  


  

   
  
  
    👉 আমাদের Facebook Page-ক্লিক করুন 🙋‍♂️

    👉আমাদের YouTube চ্যানেল - সাবস্ক্রাইব করুন 👍 


    
  

  

টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য


টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য


 


 





👉নীচের ভিডিওটি ক্লিক করে জেনে নিন আমাদের ওয়েবসাইটের ইতিহাস এবং বিভিন্ন চাকুরী সম্পর্কিত পরিসেবাগুলি 📽️



👉 জেনে আপনি আমাদের প্রয়োজনীয় পরিসেবা 📖

👉ক্লিক করুন 🌐