ইলতুৎমিশকে দিল্লি সালতানাতের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয় কেন অথবা ইলতুৎমিসের কৃতিত্ব আলোচনা করো

সিংহাসনে আরোহন

১২১০ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির সুলতান কুতুবুদ্দিন আইবকের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র আরাম শাহ দিল্লির সিংহাসনে বসেন। তাঁর শাসনে দিল্লির সুলতানি প্রশাসনের প্রবল বিশৃঙ্খলা ও গোলযোগ সৃষ্টি হয়। এই অবস্থায় দিল্লির তুর্কি অভিজাতদের একটা অংশ আইবকের জমাতা (প্রথম জীবনে আইবকের ক্রীতদাস) বদাউনের শাসক কিন্তু ইলতুৎমিশকে সিংহাসনে বসার জন্য আহ্বান জানান, তারপর ইলতুৎমিশ সৈন্য বাহিনী দিল্লিতে উপস্থিত হন এবং আরাহান শাহকে পরাজিত করে ১২১১ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির সিংহাসন আরোহন করেন।

📖 ইলতুৎমিসের সমস্যা

এক কঠিন জটিল ও বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মধ্যে ইলতুৎমিশ দিল্লির সুলতানি সিংহাসনে আরোহন করে কতগুলি সমস্যার সম্মুখীন হন ------

  1. দিল্লি তুর্কি অভিজাতদের একটা অংশের বিরোধিতা করে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
  2. ঘুর রাজ্যের অধিপত্য অজ উদ্দিন ইলদীজ (মোহাম্মদ ঘুরীর ভাতুষ্পুত্র) ভারতে দিল্লি স‌ইঘুড়ির বিজিত অঞ্চলের অধিকার দাবি করেন।
  3. বাংলায় দিল্লির সুলতানি স্বাধীনতা আর ছিন্ন করে আলিমদ্দান খলজির বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।
  4. কিন্তু ইলতুৎমিশ সেই প্রবল প্রতিবন্ধী নাসির উদ্দিন কুবাচার বিরোধিতা ও বিদ্রোহ করে।
  5. রাজপুতনায় দিল্লির সুলতানি আধিপত্য পুনর প্রতিষ্ঠা ও নব প্রতিষ্ঠিত দিল্লির শিশু সুলতানি রাজ্যের সীমানা।


👉সমস্যার মোকাবেলা ও সমাধান

কঠিন ও জটিল পরিস্থিতিতে সিংহাসনে বসে কিন্তু ইলতুৎমিশ এসবই ভাবে নিজ যোগ্যতা ও সামরিক শক্তির দ্বারা ঐক্যের পর এক সমস্যার মোকাবেলা করেন।


👉 অভিজাতদের বিদ্রোহ দমন

কিন্তু ইলতুৎমিশ তাঁর সাধারণ সামরিক প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে প্রথম দিল্লির উপরে বদাউনের বিদ্রোহী আমির ও অমরাহদের পরাজিত করে দমন করেন বিদ্রোহী ও বিরোধী অভিজাতদের দমন করে দিল্লির সুলতানিতে নিজ অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করেন ও নিজস্ব ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করেন।


👉কুপাচারের বিদ্রোহ ঘোষণা

কিন্তু ইলতুৎমিশের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সিন্ধুর শাসক নাসির উদ্দিন কুবাছা তিনি দিল্লির সুলতানি অধিষ্ঠিত অস্বীকার করে সিন্ধু অঞ্চলের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। প্রথমে ১২১৭ খ্রিস্টাব্দে এবং পরে ১২২৭ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় খুব কুবাচাকে সামরিক যুদ্ধে পরাজিত করেন। ব্যর্থ ও ভীত নাসির উদ্দিন কুবাচা সিন্ধু নদের জলে ডুবে আত্মহত্যা করে সেই সঙ্গে সুলতান ও সিন্ধু প্রদেশের ওপর ইলতুৎমিশের তথা দিল্লির সুলতান অধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।


👉বাংলার বিদ্রোহ দমন

দিল্লির সুলতানি গোলযোগের সুযোগে বাংলার শাসক আলী মর্দান খলজির সুলতানির আধিপত্য ঘোষণা করে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন, সেই সময় গিয়াস উদ্দিন খলজী নামে এক ব্যক্তি তাকে হত্যা করে নিজেকে বাংলার স্বাধীন শাসক বলে ঘোষণা করেন, কিন্তু ইলতুৎমিশ স্বয়ং সৈন্যবাহিনী নিয়ে বাংলার বিদ্রোহ ও বিশৃঙ্খলা দমন করে সেই সঙ্গে মনোনীত আলাউদ্দিন বাংলার শাসনকর্তা হিসেবে নিজেকে নিযুক্ত করে এইভাবে বাংলার উপর দিল্লির সুলতানি অধিপত্য পুনর প্রতিষ্ঠা হয়।


👉রাজপুত রাজ্যগুলির পুনরুদ্ধার

কুতুবউদ্দিন আইবকের মৃত্যুর পর নব প্রতিষ্ঠিত দিল্লি সুলতানের রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে কতগুলি রাজপুতগোষ্ঠী তাদের ভীত রাজ্য তুর্কিদের হাত থেকে পুনরুদ্ধার করে নেয়। ইলতুৎমিস এরুপ ক্ষতির স্বীকার না করে রাজপুত গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেন। একে একে গোয়ালিয়ার, রনথ মেয়র, মান্ডু, বেয়ানা, আজমির প্রভৃতি স্থান পুনর দখল করে। দিল্লির সুলতানের অন্তর্ভুক্ত করেন মানব আক্রমণ করে হিলসা ও উজ্জয়নী ধ্বংস করলে ও দখল করতে পারেননি। তবে রাজপুত গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে সামরিক সাফল্যের ফলে দিল্লির সুলতানি আধিপত্য বিস্তৃত ও সম্প্রসারিত হয়।


👉মঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধ

শাসক হিসেবে ইলতুৎমিশ অসামান্য কৃতিত্ব ছিল মঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধ। দুর্দশ মঙ্গল নেতা চেঙ্গিস খান আছেঙ্গিস্ট্রার মধ্য এশিয়ার খারজম রাজ্যের আক্রমণ করেন এবং পলাতক খারজম শাসক আর জালাল উদ্দিন মঙ্গবরনি পাঞ্জাবে চলে আসেন। তিনি পাঞ্জাব ও সুলতান দখল করে দিল্লিতে আশ্রম লাভের জন্য সুলতান ইলতুৎমিস এর কাছে প্রার্থনা করেন। চেঙ্গিস খা মঙ্গবরণীর পশ্চাতে ধরন করে সিন্ধু নদে উপস্থিত হন ও মঙ্গল বরনিকে এই অবস্থায় ইলতুৎমিশ বিচক্ষণ ও চতুর্ভাবে মঙ্গলবারণীকে আশ্রয় দিতে আবিষ্কার করে মঙ্গল আক্রমণের হাত থেকে দিল্লি তথা শিশু সুলতানি রাষ্ট্রকে রক্ষা করেন। ঐতিহাসিক হাবিবুল্লাহ ইলতুৎমিশের এই রাজ্যের ভূয়াসি প্রশংসা করেন।



👉দিল্লির সুলতানির সার্বভৌম প্রতিষ্ঠা

ইলতুৎমিসের ইসলামিয়া জগতের ধর্মগুড়ি, খলিফাদের কাছে দ্রুত প্রেরণ করেন (১২২৯ খ্রিস্টাব্দে)। খলিফা ১ ফরমান দ্বারা ইলতুৎমিস কে সুলতান-ই- অজম উপাধি দিয়ে স্বাধীন শাসকের স্বীকৃতি দেন। খলিফার অনুমোদন লাভ ইলতুৎমিসকে ইসলামীয় জগতকে স্বাধীন ও বৈধ শাসকের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করে সেই সঙ্গে দিল্লির সুলতানি রাজ্য স্বাধীন ও সার্বভৌম স্বীকৃতি লাভ করে।


📖 মূল্যায়ন

ইলতুৎমিস এক প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে দিল্লির সিংহাসনে বসেছিলেন এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি গুলিকে দমন করে নবগঠিত সুলতানি সাম্রাজ্যকে এক প্রশাসনিক কাঠামের মধ্যে স্থাপন করে। তিনি যখন সিংহাসনে বসেন তখন আইবক প্রতিষ্ঠিত সুলতানি রাজ্যের কোনো অস্তিত্ব ছিল না কিন্তু অদম্য মনবল ও বিচক্ষতা ও বৈস্নের সাথে সামরিক দক্ষতা ও সাংগঠিক প্রতিষ্ঠার দ্বারা দিল্লির সুলতানি রাজ্যকে সুসংগঠিত স্থায়ী ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করেন। তাই ঐতিহাসিকরা তাঁকে দিল্লির সুলতানের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলেছেন। বাস্তবে কিন্তু ইলতুৎমিসের কার্যকলাপ ও কৃতিত্বের জন্যই দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাস এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয় এবং প্রকৃত অর্থে দিল্লির সুলতানি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা ঘটে।

তাই ডক্টর ঈশ্বরী প্রসাদের ভাষায় বলা যায়--

Iltutmish is undoubtedly the real founder of the slave dynasty.

............. সমাপ্তি...........


✍️লেখিকা পরিচিতি

নাম- জিয়াসমিন খাতুন
কলেজ - পাঁশকুরা বনমালী কলেজ
ইউনিভার্সিটি - বিদ্যাসাগর ইউনিভার্সিটি


👉তথ্যসূত্র

  1. সতীশ চন্দ্র, "মধ্যযুগে ভারত"।
  2. অনিরুদ্ধ রায়, "মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের ইতিহাস"।
  3. V D Mahajan, "History of Medieval India".

    📖 সম্পর্কিত বিষয়

    সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো। আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন।
                  .......................................



    নবীনতর পূর্বতন
    👉 আমাদের WhatsApp Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
    
        
      
      👉 আমাদের WhatsApp Channel- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
    
    
      
    
       
    
        👉 আমাদের Facebook Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
    
    
      
    
       
      
      
        👉 আমাদের Facebook Page-ক্লিক করুন 🙋‍♂️
    
    
        👉আমাদের YouTube চ্যানেল - সাবস্ক্রাইব করুন 👍 
    
    
    
    
        
      
    
      
    
    

    টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য

    
    

    টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য


     


     




    
    

    👉নীচের ভিডিওটি ক্লিক করে জেনে নিন আমাদের ওয়েবসাইটের ইতিহাস এবং বিভিন্ন চাকুরী সম্পর্কিত পরিসেবাগুলি 📽️

    
    
    

    👉 জেনে আপনি আমাদের প্রয়োজনীয় পরিসেবা 📖

    👉ক্লিক করুন 🌐