১৯৪০ এর দশক থেকে কিউবা সংক্রান্ত সমস্যা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জটিলতা সৃষ্টি করে বিশ্বের উপর তার প্রভাব সৃষ্টি করে| কিউবা দ্বীপটি ক্যারিবীয় সাগরে অবস্থিত| স্পেন যখন দক্ষিণ আমেরিকা থেকে তার উপনিবেশগুলি ত্যাগ করতে থাকে এবং সেই সময় কিউবাও স্পেনের অধীনতা থেকে মুক্তি হয়|
কিন্তু কিউবা প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন হতে পারিনি, সেখানে স্পেনের পরিবর্তে আমেরিকার রাজনৈতিক প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়| ১৯০৩ সালে "প্লাট চুক্তি" এর অনুসারে আমেরিকা কিউবার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার অধিকার লাভ করে এবং ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত কিউবাতে আমেরিকার প্রভাব বলবৎ ছিল|
১৯৪৭ সালের আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলির মধ্যে দুটি পাস্পরিক নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর হয়, কিউবাও এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন| ১৯৫২ সালে ফুলগেনশিও বাতিস্তা আয় যালদিভার আমেরিকার সহায়তায় অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন এবং ১৯৫৪ সালে তিনি কিউবার প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন|
সমস্যা সৃষ্টি হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে| এই সময় থেকে অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে কিউবায় সাম্যবাদী প্রভাব বৃদ্ধি পেতে থাকে| ১৯৫৯ সালে ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বে কিউবায় অভ্যন্তরীণ বিপ্লব ঘটে| এর ফলে বাতিস্তা পরিচালিত সরকারের পতন ঘটে এবং ফিদেল কাস্ত্রো কিউবার শাসনভার গ্রহণ করে|
এদিকে নানা কারণে কাস্ত্রোর সাথে আমেরিকার সম্পর্কের অবনতি ঘটে| এই কারণগুলো হল-
অন্যদিকে ১৯৬০ সালে থেকে আমেরিকা কিউবায় রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করার প্রয়াস চালাতে থাকে| ১৯৬১ সালে দেশত্যাগী কাস্ত্রোর বিরোধীরা আমেরিকার সাহায্যে কিউবা আক্রমণ করে, কিন্তু কাস্ত্রো তা ব্যর্থ করে দেয়| এর প্রতিক্রিয়াস্বরূপ আমেরিকা কিউবার সঙ্গে আগের দুটি চুক্তি ছিন্ন করে এবং O.A.S (organisation of American States) থেকে বহিষ্কার করে করে|
এমতবস্থায় কিউবা তার নিরাপত্তার ব্যাপারে চিন্তিত হয়ে পড়ে এবং তার জন্য রাশিয়ার দ্বারস্থ হয়| কিউবা ভয় পাচ্ছিল যে, "রিও প্যাক্ট" (Rio Pact) এর অন্যান্য দক্ষিণ আমেরিকা সদস্য রাষ্ট্র হয়তো কিউবা আক্রমণ করতে পারে|
সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট নিকিতা ক্রুশ্চেভ কিউবাকে অস্ত্র সাহায্য করে এবং কিউবা রাশিয়ার সাহায্যে একটি ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি নির্মাণ করে| এই খবর প্রকাশিত হলে আমেরিকা মনে করে, "আমেরিকা সহ পশ্চিম গোলার্ধে নিরাপত্তা ব্যাহত হবে"| এদিকে রাশিয়ার সাহায্য নিয়ে কিউবা তার বিমান বাহিনীকেও শক্তিশালী করার চেষ্টা করে|
ধীরে ধীরে কিউবাকে কেন্দ্র করে বিশ্বের দুই শক্তিশালী দেশ সোভিয়েত রাশিয়া ও আমেরিকার মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়| কেনেডি কিউবার চারদিকে নৌ অবরোধ সৃষ্টি করে এবং ঘোষণা করে, কিউবাগামী সমস্ত জাহাজেই অনুসন্ধান করা হবে| এরপর থেকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে|
এই পরিস্থিতিতে কিউবা, রাশিয়া ও আমেরিকা তিনপক্ষই সম্মিলিত জাতিপুঞ্জে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয় এবং রাষ্ট্রসংঘ শান্তিতে থাকার জন্য রাশিয়া ও আমেরিকার কাছে আবেদন করে| শান্তির প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাষ্ট্রসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল উথান্ট যে প্রস্তাবগুলো রাখেন তা হল, সোভিয়েত জাহাজ যেন মার্কিন প্রহরারত জাহাজ থেকে দূরে থাকে, অন্যদিকে আমেরিকাকে আরো সংযত হতে হবে|
এই সময় কেনেডি জানান যে, আমেরিকা কিউবা থেকে নৌ অবরোধ তুলে নিবে, কিন্তু রাশিয়াকেও কিউবা থেকে তার ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিগুলি সরিয়ে নিতে হবে| এরপর প্রকৃতপক্ষে রাশিয়া কিউবা থেকে তার ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিগুলি তুলে নেই|
.......................................
![]() |
কিউবার মানচিত্র |
কিউবাতে মার্কিন প্রভাব হ্রাস
এই সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট দক্ষিণ আমেরিকার প্রতি "Good Neighbour policy" অনুসরণ করার ফলে কিউবা ও আমেরিকার সম্পর্ক উন্নতি হয় এবং ধীরে ধীরে কিউবাতে মার্কিন প্রভাব হ্রাস পায়|১৯৪৭ সালের আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলির মধ্যে দুটি পাস্পরিক নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর হয়, কিউবাও এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন| ১৯৫২ সালে ফুলগেনশিও বাতিস্তা আয় যালদিভার আমেরিকার সহায়তায় অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন এবং ১৯৫৪ সালে তিনি কিউবার প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন|
কিউবার সাথে আমেরিকার সম্পর্কের অবনতি
![]() |
ফিদেল কাস্ত্রো |
এদিকে নানা কারণে কাস্ত্রোর সাথে আমেরিকার সম্পর্কের অবনতি ঘটে| এই কারণগুলো হল-
- সোভিয়েত রাশিয়ার সাথে কাস্ত্রোর মৈত্রী নীতি|
- কিউবা স্বাধীনভাবে পররাষ্ট্র নীতি পরিচালনা|
- বৈদিশিক শিল্প ও বাণিজ্যে জাতীয়করণ|
- কিউবার অর্থনীতি শক্তিশালী করে মার্কিন নির্ভরতা কমানো|
- কিউবার সমাজতান্ত্রিক দুনিয়ার সাথে মৈত্রী স্থাপন|
- রাশিয়ার উপর অর্থনৈতিক ও সামরিক নির্ভরতা স্থাপন|
অন্যদিকে ১৯৬০ সালে থেকে আমেরিকা কিউবায় রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করার প্রয়াস চালাতে থাকে| ১৯৬১ সালে দেশত্যাগী কাস্ত্রোর বিরোধীরা আমেরিকার সাহায্যে কিউবা আক্রমণ করে, কিন্তু কাস্ত্রো তা ব্যর্থ করে দেয়| এর প্রতিক্রিয়াস্বরূপ আমেরিকা কিউবার সঙ্গে আগের দুটি চুক্তি ছিন্ন করে এবং O.A.S (organisation of American States) থেকে বহিষ্কার করে করে|
এমতবস্থায় কিউবা তার নিরাপত্তার ব্যাপারে চিন্তিত হয়ে পড়ে এবং তার জন্য রাশিয়ার দ্বারস্থ হয়| কিউবা ভয় পাচ্ছিল যে, "রিও প্যাক্ট" (Rio Pact) এর অন্যান্য দক্ষিণ আমেরিকা সদস্য রাষ্ট্র হয়তো কিউবা আক্রমণ করতে পারে|
সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট নিকিতা ক্রুশ্চেভ কিউবাকে অস্ত্র সাহায্য করে এবং কিউবা রাশিয়ার সাহায্যে একটি ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি নির্মাণ করে| এই খবর প্রকাশিত হলে আমেরিকা মনে করে, "আমেরিকা সহ পশ্চিম গোলার্ধে নিরাপত্তা ব্যাহত হবে"| এদিকে রাশিয়ার সাহায্য নিয়ে কিউবা তার বিমান বাহিনীকেও শক্তিশালী করার চেষ্টা করে|
সোভিয়েত রাশিয়া ও আমেরিকার মধ্যে দ্বন্দ্ব
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জন ফিট্জেরাল্ড কেনেডি ১৯৬২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার সেনা বাহিনীকে প্রস্তুত করে| রাশিয়া এই ঘটনার নিন্দা করে সোভিয়েত বাহিনী প্রস্তুত করার কথা বলে|![]() |
জন ফিট্জেরাল্ড কেনেডি |
ধীরে ধীরে কিউবাকে কেন্দ্র করে বিশ্বের দুই শক্তিশালী দেশ সোভিয়েত রাশিয়া ও আমেরিকার মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়| কেনেডি কিউবার চারদিকে নৌ অবরোধ সৃষ্টি করে এবং ঘোষণা করে, কিউবাগামী সমস্ত জাহাজেই অনুসন্ধান করা হবে| এরপর থেকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে|
এই পরিস্থিতিতে কিউবা, রাশিয়া ও আমেরিকা তিনপক্ষই সম্মিলিত জাতিপুঞ্জে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয় এবং রাষ্ট্রসংঘ শান্তিতে থাকার জন্য রাশিয়া ও আমেরিকার কাছে আবেদন করে| শান্তির প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাষ্ট্রসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল উথান্ট যে প্রস্তাবগুলো রাখেন তা হল, সোভিয়েত জাহাজ যেন মার্কিন প্রহরারত জাহাজ থেকে দূরে থাকে, অন্যদিকে আমেরিকাকে আরো সংযত হতে হবে|
এই সময় কেনেডি জানান যে, আমেরিকা কিউবা থেকে নৌ অবরোধ তুলে নিবে, কিন্তু রাশিয়াকেও কিউবা থেকে তার ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিগুলি সরিয়ে নিতে হবে| এরপর প্রকৃতপক্ষে রাশিয়া কিউবা থেকে তার ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিগুলি তুলে নেই|
মূল্যায়ন
এইভাবে বিশ্বের দুই শক্তিশালী নেতার মনে শুভ বুদ্ধির উদয় হবার ফলেই কিউবা সমস্যার সামরিক সমাধান হয় এবং অনেক আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞদের মতে, "১৯৬২ সালের তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সম্ভাবনা দূর হয়"|তথ্যসূত্র
- Ghosh Peu, "International Relations".
- Carlos Alberto Montaner, "Fidel Castro and the Cuban Revolution: Age, Position, Character, Destiny, Personality, and Ambition".
সম্পর্কিত বিষয়
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময় উপনিবেশবাদের পতন তথা এর গুরুত্ব (আরো পড়ুন)
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জার্মানির বিভাজন তথা বিশ্ব রাজনীতিতে তার প্রভাব (আরো পড়ুন)
- ইতালিতে ফ্যাসিবাদের উত্থানের কারণ (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|