উনবিংশ শতকের প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী বিতর্ক

ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার অবক্ষয় শুরু হয় অষ্টাদশ শতকের শেষ দিক থেকে| এর প্রধান কারণ ছিল, সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হওয়া বা ইংরেজ সরকারের দেশে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি অবজ্ঞা করা| অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয় দশক থেকে কোম্পানি দেশীয় শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি কোন আগ্রহ দেখাননি| 

কারণ তাদের মধ্যে ধারণা ছিল, ভারতীয়রা শিক্ষা ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করলে ভারতীয়দের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হতে পারে এবং কোম্পানি সরকারের শিক্ষা নীতির মধ্যে একটি নিজস্ব বিতর্কের বিষয় ছিল| সেই বিতর্কিত হলো, অনেকেই চেয়েছেন ইংরেজি শিক্ষার মাধ্যমে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তার ঘটানো এবং এদেরকে বলা হতো পাশ্চাত্যবাদী| 

এই পাশ্চাত্যবাদীদের ভারতীয় সংস্কৃতি বা সভ্যতা সম্পর্কে তাদের বিন্দুমাত্র জ্ঞান বা ধারণা ছিল না| কারণ ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাকে তারা সর্বদাই নিচু চোখে দেখত|

কিন্তু ওয়ারেন হেস্টিংস, উইলিয়াম জোন্স প্রমুখরা ভারতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি আগাগোড়া থেকেই শ্রদ্ধাশীল ছিলেন এবং এদেরকে বলা হতো প্রাচ্যবাদী| মূলত এদের উদ্যোগে কলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটি, হিন্দু কলেজ ও কলকাতায় বিভিন্ন মাদ্রাসা গড়ে উঠেছিল|


উনবিংশ-শতকের-প্রাচ্যবাদী-ও-পাশ্চাত্যবাদী-বিতর্ক



1813 সালে শিক্ষার ক্ষেত্রে এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়| কিন্তু এই এক লক্ষ টাকা প্রাচ্য না পাশ্চাত্য শিক্ষা খাতে খরচ করা হবে, তা উল্লেখ করা হয়নি| তাই শিক্ষা সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণের জন্য জেনারেল কমিটি বা Public instruction গঠন করা হয়| এই জেনারেল কমিটিতে 10 জন সদস্য ছিলেন এবং এদের মধ্যে 5 জন ছিলেন পাশ্চাত্যবাদী|

এই এক লক্ষ টাকা কলকাতায় একটি সংস্কৃত কলেজ গড়ে তোলার পেছনে খরচ করা হবে বলে রাজা রামমোহন রায় এর বিরোধিতা করেন| কেননা তিনি মনে করেছিলেন, সংস্কৃত শিক্ষার মাধ্যমে ছাত্ররা কেবলমাত্র ব্যাকরণ এবং অধিবিদ্যা গত জ্ঞানে পারদর্শী লাভ করবে| কিন্তু বাস্তব জীবনে যার প্রয়োজন ছিল, তা খুব সামান্য, কেননা সেই সময় বাতাবরণ চলছিল পাশ্চাত্যবাদী অনুকূলে|

উনবিংশ-শতকের-প্রাচ্যবাদী-ও-পাশ্চাত্যবাদী-বিতর্ক
রামমোহন রায়
Source- wikipedia (check here)
Year of publication- 1907
Author- Sastri, Sibnath
Modified- colour and background


তাছাড়া কলকাতার ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণী ইংরেজি ভাষায় শিখতে এবং পাশ্চাত্য সাহিত্য ও বিজ্ঞান বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছিল| কিন্তু প্রাচ্যবাদীরা এই সহজ সত্যটা বুঝতে না পেরে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা দানের উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন|

প্রাচ্যবাদীদের ধ্যান-ধারণার চূড়ান্ত পরাজয় ঘটেছিল লর্ড ম্যাকলের হাতে| ম্যাকলে তখন ভারতের গভর্নর জেনারেল কাউন্সিলের আইন বিষয়ক সদস্য হিসাবে নিযুক্ত হন| ম্যাকলে ইংরেজদের জাতিগত ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাসী ছিলেন| তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রতি বেশি আগ্রহী ছিলেন| কারণ তিনি নিজে মনে করতেন, ইংরেজি ছিল সাংস্কৃতিক উন্নয়নের একমাত্র দিশারী|

ম্যাকলে মনে করেন, তার প্রাথমিক উদ্দেশ্য হবে একদল ভারতীয় ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণী তৈরি করা| অর্থাৎ তিনি বুঝাতে চেয়েছিলেন যে, ভারতীয়রা বর্ণে ও রক্তে ভারতীয় হিসাবে পরিচিত থাকবে, কিন্তু রুচিতে, মতাদর্শে ও মানবিকতায় হবে ইংরেজ প্রভাবিত| তার সঙ্গে তিনি এক কথায় জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলি ভারতীয় ভাষায় শিক্ষাদান করতে পারে, কিন্তু তারা কোনো রকম সরকারি সাহায্য পাবে না|

ম্যাকলের এই নীতি লর্ড বেন্টিংককে খুব উৎসাহিত করেছিল| তার উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে তিনি ঘোষনা করে বলেন যে, সরকারের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হবে ভারতীয়দের ইউরোপীয় সাহিত্য ও বিজ্ঞানে শিক্ষিত করে তোলা এবং শিক্ষা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ কেবলমাত্র ইংরেজি শিক্ষার জন্য ব্যয় করা হবে|

পরবর্তীকালে অকল্যান্ডের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী বিতর্কের অবসান হয়| তিনি বলেন যে, প্রাচ্য শিক্ষা বিস্তার ঘটানোর প্রয়াস অক্ষুণ্ণ রেখে প্রাচ্যবাদী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য বছরে 31 হাজার টাকার অধিক ব্যয় করা হবে এবং দেশীয় ভাষা ও ইংরেজি ভাষা দুই এর মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা দেওয়া হবে|


সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
              ......................................................

নবীনতর পূর্বতন
👉 আমাদের WhatsApp Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️

    
  
  👉 আমাদের WhatsApp Channel- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
  


  

   

    👉 আমাদের Facebook Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
  


  

   
  
  
    👉 আমাদের Facebook Page-ক্লিক করুন 🙋‍♂️

    👉আমাদের YouTube চ্যানেল - সাবস্ক্রাইব করুন 👍 


    
  

  

টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য


টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য


 


 





👉নীচের ভিডিওটি ক্লিক করে জেনে নিন আমাদের ওয়েবসাইটের ইতিহাস এবং বিভিন্ন চাকুরী সম্পর্কিত পরিসেবাগুলি 📽️



👉 জেনে আপনি আমাদের প্রয়োজনীয় পরিসেবা 📖

👉ক্লিক করুন 🌐