অষ্টাদশ শতকের ইউরোপের আলোকিত যুগ

পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকের রেনেসাঁস বা জাগতিক আন্দোলনের ফলে মধ্যযুগীয় কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাসের পরিবর্তে যুক্তির দ্বারা লোক সব কিছুর বিচার করতে শিখে| সপ্তদশ শতকের রেনেসাঁস প্রভাবিত জ্ঞানের আরোও বিকাশ ঘটে| 

বিজ্ঞান, দর্শনের ক্ষেত্রে নতুনকে জানার আগ্রহ দেখা দেয়| অষ্টাদশ শতকে রেনেসাঁস জাত যুক্তিবাদ ইউরোপের চিন্তা ধারাকে পুরোপুরি অধিকার করে| এই যুগে প্রকৃতি বিজ্ঞান, সমাজব্যবস্থা, রাষ্ট্র ব্যবস্থা সকল ক্ষেত্রেই মানুষ যুক্তিবাদ প্রয়োগ করে প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার সত্যতা যাচাই করতে চাই, ফলে অষ্টাদশ শতককে "আলোকিত যুগ" বা "আলোকায়ন যুগ" বা "জ্ঞানদীপ্তির যুগ" (ইংরেজিতে- Age of Enlightenment) বলা হয়ে থাকে|

অষ্টাদশ-শতকের-ইউরোপের-আলোকিত-যুগ



এই শতাব্দীর মানুষের নিকট যুক্তি এবং বুদ্ধি ছিল শ্রেষ্ঠ| এই বুদ্ধি বা যুক্তি জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা ক্ষেত্রে বিকশিত হলেও এর মধ্যে কয়েকটি সাধারণ দিক ছিল, যথা-
  1. প্রকৃতির রহস্যকে যুক্তির দ্বারা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা|
  2. মানুষের অভিজ্ঞতাকে যুক্তির দ্বারা প্রমাণ করা|
  3. যুক্তিবাদকে ধর্মের উপর স্থান দেওয়া|
  4. সামাজিক প্রথা ও ধর্ম বিশ্বাসকে যুক্তির দ্বারা যাচাই করে গ্রহণ করা, ইত্যাদি|
মোটকথা অষ্টাদশ শতকে চিন্তা ক্ষেত্রে Rationalism বা যুক্তিবাদের ব্যাপক প্রয়োগ দেখা দেয়| জ্ঞানদীপ্তির ইহাই ছিল মূল কথা|

অষ্টাদশ শতকে জ্ঞানদীপ্তি বা বুদ্ধি বিভাষার প্রভাব প্রধানত নাগরিক বুর্জোয়া শ্রেণীর মধ্যে ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছিল| তারা স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারে যে, যুক্তিবাদের দ্বারাই সমাজের পুরাতন ব্যবস্থাকে লোপ করতে পারবে| আইনজীবী, শিক্ষক, চাকুরিয়া, বণিক প্রভৃতি ছিল নব দার্শনিকের পৃষ্ঠপোষক| আবার কোন কোন রাজা নব দর্শনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ইহা চর্চা শুরু করে| যাইহোক এই আলোকিত দর্শন বা বুদ্ধি বিভাষাকে তিনটি পর্বে ভাগ করা যায়, যথা- 1715-1750 খ্রি:, 1750-1774 খ্রি:, 1774-1789 খ্রি:|

প্রথম পর্বে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মানব দেহের রক্ত সঞ্চালন তত্ত্ব, স্যার আইজ্যাক নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব বিশেষ ভাবে খ্যাতি পায়| 

ইংল্যান্ডের দার্শনিক জন লক তার "সামাজিক চুক্তি তত্ত্ব" প্রচার করেন| লক বলেন যে, "রাজা ঈশ্বরের আদেশের বলে(Force) রাজত্ব করেন না, তিনি সামাজিক চুক্তির দ্বারা যে অধিকার পেয়েছেন, তার বলেই রাজত্ব করতে অধিকারী"| লকের মতবাদ ফ্রান্সের চিন্তাবিদদের বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল|

অষ্টাদশ-শতকের-ইউরোপের-আলোকিত-যুগ
গির্জা



আবার এই যুগে সমাজের অগ্রগতি ধর্মের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো| সুতরাং রক্ষণশীল লোকেরা ধর্মের নামে প্রগতিকে বাধা দিতো| দার্শনিকরা ক্যাথলিক ধর্মকে সমালোচনা করায় ক্যাথলিক গির্জার প্রভাব কমতে থাকে| ইহার ফলে সমাজে স্বাধীন চিন্তার বিকাশ ঘটে|

দ্বিতীয় পর্বে 1750-1774 খ্রিস্টাব্দে জ্ঞানদীপ্তির প্রকাশ ঘটে| ফরাসি দার্শনিকরাই ছিলেন এই পর্বের প্রধান পুরোহিত| এই শ্রেণীর দার্শনিকদের মধ্যে প্রখ্যাত ছিলেন ভলতেয়ার| ভলতেয়ার সামাজিক ন্যায়-বিচার, ধর্ম সহিষ্ণুতা এবং স্বাধীন চিন্তার পক্ষে যুক্তির বিস্তার করেন| আবার দার্শনিকদের মধ্যে রুশো ছিলেন সর্বাপেক্ষা মৌলিক এবং অগ্রগামী|

জ্ঞানদীপ্তির যুগে মানবতাবাদের বা হিউম্যানিজমেরও প্রসার ঘটে| এই সময় ইংল্যান্ডে কোয়েকার সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে| এরা নিপীড়ন ও নির্যাতনমূলক প্রথাগুলির বিরুদ্ধে জনমত গঠন করেন|

তৃতীয় পর্বে 1774-1789 খ্রিস্টাব্দে দার্শনিক বা ফিলজাফরদের চিন্তার বাস্তব প্রয়োগের চেষ্টা লক্ষ্য করা যায়| দার্শনিকদের মতবাদগুলি জনসাধারণের নিকট পত্র-পত্রিকা, আড্ডাখানা এবং কফিখানার আলোচনার মাধ্যমে জন সমাজে ছড়িয়ে পড়ে|

অষ্টাদশ-শতকের-ইউরোপের-আলোকিত-যুগ
পত্র-পত্রিকা


ফলাফলের নিরিখে বলা যায় যে, আলোকিত দর্শনের প্রভাবে অষ্টাদশ শতকের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটে| প্রথমত দার্শনিকদের তাদের মর্যাদা হারিয়ে ফেলে| সমালোচনায় ক্যাথলিক গির্জাগুলি তাদের মর্যাদা হারিয়ে ফেলে| 

বুর্জোয়া শ্রেণী খ্রিস্টীয় পাপ বোধ ও বৈরাগ্য হতে মুক্ত হয়ে জীবনের আদর্শ গ্রহণ করে| যুক্তিবাদের বিচারের ফলে মানুষের আত্মবিশ্বাস বাড়ে| লোক আস্তে আস্তে বুঝতে পারে যে, প্রত্যেক ব্যক্তির স্বাধীনতা ভোগ করার অধিকার আছে| 

দিদেরো বলেন, "আমাদের শতাব্দীর মূল লক্ষ্য হলো- স্বাধীনতা| ফলে জনমানুষের বিপ্লবী মানসিকতা সৃষ্টি হয়"|



তথ্যসূত্র

  1. অধ্যাপক গোপালকৃষ্ণ পাহাড়ি, "ইউরোপের ইতিবৃত্ত"
  2. J. Patrice Marandel, "Europe in the Age of Enlightenment and Revolution".
  3. Roberta J. M., "The Biography of the Object in Late Medieval and Renaissance Italy".

সম্পর্কিত বিষয়

সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
                     .......................................

    নবীনতর পূর্বতন
    👉 আমাদের WhatsApp Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
    
        
      
      👉 আমাদের WhatsApp Channel- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
    
    
      
    
       
    
        👉 আমাদের Facebook Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
    
    
      
    
       
      
      
        👉 আমাদের Facebook Page-ক্লিক করুন 🙋‍♂️
    
    
        👉আমাদের YouTube চ্যানেল - সাবস্ক্রাইব করুন 👍 
    
    
    
    
        
      
    
      
    
    

    টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য

    
    

    টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য


     


     




    
    

    👉নীচের ভিডিওটি ক্লিক করে জেনে নিন আমাদের ওয়েবসাইটের ইতিহাস এবং বিভিন্ন চাকুরী সম্পর্কিত পরিসেবাগুলি 📽️

    
    
    

    👉 জেনে আপনি আমাদের প্রয়োজনীয় পরিসেবা 📖

    👉ক্লিক করুন 🌐