শুঙ্গ রাজবংশ ও তার গুরুত্ব

বিশাল মৌর্য সাম্রাজ্যের অধিপতি সম্রাট অশোকের মৃত্যুর পরেই এই সাম্রাজ্যটি নানা কারণে ধ্বংসের পথে চলে যেতে শুরু করে। যোগ্য শাসক অশোকের অবর্তমানে এই সাম্রাজ্যের হাল ধরার মতন কোন শাসক না থাকায় সমাজের ঐক্য ও সংহতি বিনষ্ট হয়।

শুঙ্গ-রাজবংশ-ও-তার-গুরুত্ব

Title- চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য
Author-आशीष भटनागर
Date-6 December 2009
Source- wikipedia (check here)
Modified- colour and background
License- creative Commons



মৌর্য সাম্রাজ্যের শেষ মৌর্য সম্রাট অত্যাচারী বৃহদ্রথের জনপ্রিয়তার অভাবের সুযোগ নিয়ে তার সেনাপতি পুষ্যমিত্র তাকে হত্যা করেন। তিনি মৌর্য সাম্রাজ্যের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করে সেনাপতি পুষ্যমিত্র যে সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন, তা শুঙ্গ সাম্রাজ্যের নামে প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে এক নব অধ্যায়ের রচনা করেন।

সমসাময়িক সাহিত্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানগুলি শুঙ্গ রাজত্বকাল সম্পর্কে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। যেমন- পুরাণ, বাণভট্টের হর্ষচরিত, পতঞ্জলির মহাভাষ্য, গার্গী সংহিতা, কালিদাসের মালবিকাগ্নিমিত্রম প্রভৃতি। সাহিত্যিক উপাদানের মতই অযোধ্যা ও বিদিশায় শিলালিপিগুলি গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া অযোধ্যাতে প্রাপ্ত মুদ্রা থেকে শুঙ্গদের সম্পর্কে আমরা তথ্য সংগ্রহ করতে পারি।

তবে শুঙ্গ বংশের উৎপত্তি সম্পর্কে অনিশ্চিয়তা আছে। যেমন- কালিদাসের মালবিকাগ্নিমিত্রম অনুসারে পুষ্যমিত্রের পুত্র অগ্নিমিত্র ছিলেন বৈম্বিক বংশজাত। পাণিনি শুঙ্গ বংশকে প্রখ্যাত ব্রাহ্মণ পরিবার, ভরদ্বাজদের পরিবারের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। তবে যাইহোক শুঙ্গদের সম্পর্কে বহু মতবাদ থাকা সত্ত্বেও ঐতিহাসিকরা পুষ্যমিত্রকে ব্রাহ্মণ বলে উল্লেখ করেছেন।




শুঙ্গ রাজত্বকাল এর গুরুত্ব

ভারতবর্ষের ইতিহাসে শুঙ্গ বংশের রাজত্বকাল এক গুরুত্বপূর্ণ সময়। শুঙ্গ রাজাদের মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য ছিলেন পুষ্যমিত্র। পুষ্যমিত্রের রাজত্বকালের সবথেকে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল যবন অর্থাৎ গ্রিকদের সঙ্গে তার সংগ্রাম। পতঞ্জলির মহাভাষ্য থেকে জানা যায় যে, যবন শক্তি অযোধ্যা ও মাধুমিকা চিতরের সন্নিকট স্থানে দখল করেছিলেন।

গার্গী সংহিতার তথ্য থেকে জানা যায় যে, যবন শক্তি মথুরা, অযোধ্যা এমনকি পাটলিপুত্র পর্যন্ত অগ্রসর হন। তবে কোন যবনরা এই সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছিলেন তা নির্দিষ্টট করে বলা যায় না। সম্ভবত এই যবন আক্রমণকারী ছিলেন ডেমিট্রিয়াস কিংবা মিনান্দার।

সমসাময়িক বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায় যে, বৈদেশিক আক্রমণকারীরা পাটলিপুত্র সন্নিকট স্থানে পরাজিত হয়েছিলেন এবং তারা প্রত্যাবর্তনে বাধ্য হন। কালিদাসের মালবিকাগ্নিমিত্রমে একটি যবন অভিযানের কথা উল্লেখ আছে। পুষ্যমিত্রের বৃদ্ধাবস্থায় যবন রাজ মিনান্দার শুঙ্গ রাজ্য আক্রমণ করেছিলেন। এই সময় পুষ্যমিত্রের সেনাপতি বসুমিত্র সিন্ধু নদীর তীরে যুদ্ধে তিনি তাদের পরাজিত করেন। শুঙ্গ রাজা গ্রীকদের এই অগ্রগতির প্রতিহত করে শুধু যে আর্যাবর্তের নিরাপত্তা বিধান করেছিলেন এমন নয়, ভারতীয় রাাজাদর সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

শুঙ্গ বংশের ধর্মের যে পুনরুত্থান ঘটে, গুপ্ত যুগের তার চরম প্রকাশ দেখা যায়। মনুস্মৃতি এই যুগেই রচিত হয়েছিল বলে অনেকেই মনে করেন। এই যুগের ব্রাহ্মণ ধর্মের যথেষ্ট প্রাধান্য ছিল ও পুষ্যমিত্র কর্তৃক অশ্বমেধ যজ্ঞের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়- যা শতাব্দীর পরে গুপ্তদের আমলে পূর্ণতা লাভ করে।


এই যুগের অনুশাসন লিপি থেকে মনে হয় যে, ভাগবত ধর্ম ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। যদিও এধর্মের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য অশোকের মতো সম্রাট সেই সময় ছিলেন না, তথা এই ধর্মের অনুগামীদের সংখ্যা বেশি ছিল। এই যুগে শিল্পকলার চরম উৎকর্ষ লাভ করে। শুঙ্গ যুগে সাহিত্যের ক্ষেত্রেও বিশেষ উন্নতি ঘটে। এই যুগের সাহিত্যিকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন দিব্যপাল ও পতঞ্জলি প্রমূখ। পতঞ্জলি ছিলেন সাহিত্যিক ও দার্শনিক সমসাময়িক সমাজ, ধর্ম, দর্শন, সাহিত্য ও বিভিন্ন শিল্পকলার দিকে তাঁর গ্রন্থ মহাভাষ্য পরিস্ফুটিত হয়েছে।

শুঙ্গ রাজারা হইত বৃহৎ আয়তন রাজ্য গঠন করেননি বা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে হয়তো উল্লেখযোগ্য সাফল্য তারা অর্জন করেনি। কিন্তু ভারতের ইতিহাসে এই যুগ এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রূপে স্বীকৃত। কৃষি বাণিজ্যের প্রসার, আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের উন্নতি, ভাগবত ধর্মের বিস্তার, সাহিত্যের অগ্রগতি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ভারতীয় সংস্কৃতির প্রসার ও শিল্পকলার নতুন চেতনার উন্মেষ প্রভৃতির বৈশিষ্ট্য এক নতুন যুগ হিসাবে ইতিহাসের পাদপ্রদীপের সামনে নিয়ে আসে।



তথ্যসূত্র

  1. সুনীল চট্টোপাধ্যায় "প্রাচীন ভারতের ইতিহাস" (প্রথম খন্ড)
  2. Poonam Dalal Dahiya, "Ancient and Medieval India".
  3. Upinder Singh, "A History of Ancient and Early Medieval India: From the Stone Age to the 12th Century".

সম্পর্কিত বিষয়

  1. ঋক বৈদিক যুগ এবং পরবর্তী বৈদিক যুগের ধর্মীয় ভাবনা (আরো পড়ুন)
  2. বৈদিক এবং ঋক বৈদিক যুগে প্রশাসনিক ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)
  3. প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য  (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
                     .......................................


    নবীনতর পূর্বতন
    👉 আমাদের WhatsApp Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
    
        
      
      👉 আমাদের WhatsApp Channel- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
    
    
      
    
       
    
        👉 আমাদের Facebook Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
    
    
      
    
       
      
      
        👉 আমাদের Facebook Page-ক্লিক করুন 🙋‍♂️
    
    
        👉আমাদের YouTube চ্যানেল - সাবস্ক্রাইব করুন 👍 
    
    
    
    
        
      
    
      
    
    

    টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য

    
    

    টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য


     


     




    
    

    👉নীচের ভিডিওটি ক্লিক করে জেনে নিন আমাদের ওয়েবসাইটের ইতিহাস এবং বিভিন্ন চাকুরী সম্পর্কিত পরিসেবাগুলি 📽️

    
    
    

    👉 জেনে আপনি আমাদের প্রয়োজনীয় পরিসেবা 📖

    👉ক্লিক করুন 🌐