ভারতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যার ঐতিহ্য সুপ্রাচীন ও সমৃদ্ধ হলেও অষ্টম শতাব্দীর পর তার চরম অবক্ষয় সম্মুখীন হয়। 1150 খ্রিস্টাব্দে শ্রীপতি ও দ্বিতীয় ভাস্করা শাস্ত্র এর অংক শাস্ত্রের ভূৎপত্তি মূলক লেখার মধ্য দিয়ে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের দিকে আবার ভারতবর্ষে প্রত্যাবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
আলবেরুনি ভারতে এই সময়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অবক্ষয়ের জন্য ব্রাহ্মণদের উদ্ধত্য ও সঙ্কীর্ণতা দায়ী করেছেন। তুর্কিদের আগমন এর পর আরব বিজ্ঞানের সঙ্গে ভারতে সম্মুখ পরিচয় ঘটে।
অধ্যাপক সতীশচন্দ্র প্রশ্ন তুলেছেন কেন এই বিলম্ব? ভারতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান আরবে পথ খুঁজে পেলেও আরবি জ্ঞান-বিজ্ঞান ভারতে প্রবেশ পথ এই যুগে খুঁজে পাইনি। অথচ শরণার্থী কাল থেকে আরবের সঙ্গে ভারতের নিবিড় যোগাযোগ ছিল। ভারতীয় চিকিৎসক ও দক্ষ কারিগরদের বাগদাদের খলিফাদের দরবারে সাদরে অভ্যর্থনা জানানো হয়েছিল। গবেষক সতীশচন্দ্র মতে, আরবি জ্ঞান-বিজ্ঞানীরা খলিফাদের সুশীতল ছায়াতলে জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে যে স্বাধীনতা ভোগ করতেন এবং তার ফলে আরবে বিজ্ঞান ও সভ্যতার বিকাশ সম্ভবপর হয়েছিল।
অধ্যাপক সতীশচন্দ্র প্রশ্ন তুলেছেন যে, আরবি জ্ঞান-বিজ্ঞানীরা বিদ্যাচর্চা ক্ষেত্রে কি সেই স্বাধীনতা ছিলনা? সম্ভবত এই ফলে ভারতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যার এই যুগে ব্যাহত হয়েছিল।
তুলো |
তুর্কিদের আগমনে সঙ্গে সঙ্গে ভারতে অনেক নতুন প্রযুক্তি মোটামুটি সূচনা হয়, যথা- চরকা, তুলোধোনা ধনুক, জল তোলার উন্নত মানের যন্ত্র প্রভৃতি। বিজ্ঞান বিষয়ে সংযোগ ঘটেছিল প্রধানত জ্যোতির্বিজ্ঞান, অংক ও ঔষধ বিষয় বিজ্ঞানে।
যাইহোক একাদশ শতাব্দীর প্রথমে ইসলামী দুনিয়ায় প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান ভয়ঙ্করভাবে তীব্রতা লাভ করে। এইসময় প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান দর্শন নামে পরিচিত ছিল। এই সময়ে বিজ্ঞান, ধর্ম, অতীন্দ্রিয়বাদ ও সৌন্দর্য বিজ্ঞান প্রভৃতি মিলেমিশে একাকার হয়েগেছিল। ইউরোপ এই আরব বিজ্ঞানীদের কাছে চিরঋণী। নতুন বিষয় বলতে ভূগোল, পদার্থবিদ্যা বিশেষ করে দৃষ্টি বিজ্ঞান, মধ্যাকর্ষণ শক্তি, গতি ও সময়ের বিজ্ঞান ক্ষেত্রে ব্যাপক চর্চা শুরু হয়।
বহু ধর্মের বিজ্ঞান ইন্দ্রজাল ও মৃত প্রভৃতি সংমিশ্রণ হয়েছিল। ইউরোপে পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমদিকে বিজ্ঞান মতে বিশেষ যুক্তি দ্বারা পৃথক হয়ে যায়। কোন ল্যাবরটরি বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষামূলক বিজ্ঞান ছিল না। যদিও ভারতে প্রাচীনকালে কাঞ্চিপুরম ও তক্ষশীলায় বিদ্যালয় ছিল কিন্তু মধ্য যুগে ভারতে বিশাল বিশাল মাদ্রাসা ছিল। তবে এর সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তির কোন কোন ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছিল তা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন কাজ। তবে ইরফান হাবিব এর মতে- বস্ত্রশিল্প, সেচ ব্যবস্থা, শিক্ষা সামগ্রী ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যাপক রূপান্তর ঘটে।
পার্সিয়ান হুইল |
এই যুগে তার একটি প্রযুক্তির ব্যবহার দেখা যায় তা হল গিয়ারের ব্যবহার করে পার্সিয়ান হুইল নামক একটি যন্ত্র, যা জল তোলার কাজে ব্যবহৃত হতো। পার্সিয়ান হুইল এর ব্যবহারের ফলে সিন্ধু, পাঞ্জাব, লাহোর, দিল্লি, আগ্রা প্রদেশে কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছিল। এরপর কাগজে প্রবর্তন প্রযুক্তিবিদ্যার ক্ষেত্রে বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান। কম্পাসের ব্যবহারের ফলে সামুদ্রিক নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছিল।
যাইহোক এইসব কারণ এর ফলে ভারতবর্ষে গতিপ্রকৃতি চরিত্র সম্পূর্ণভাবে বদলে যায় এবং এই প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের ফলে কারিগরি কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং তার সঙ্গে বাণিজ্যিক সক্রিয়তা ব্যাপক পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছিল।
তথ্যসূত্র
- Poonam Dalal Dahiya, "Ancient and Medieval India"
- Upinder Singh, "A History of Ancient and Early Medieval India: From the Stone Age to the 12th Century"
সম্পর্কিত বিষয়
- আলাউদ্দিন খলজির অর্থনৈতিক সংস্কার (আরো পড়ুন)
- দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্রকে কি ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র বলা যায় (আরো পড়ুন)
- মুঘল আমলে বাংলার সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা (আরো পড়ুন)
- 1707 থেকে 1740 সালের মধ্যে মুঘল রাজ দরবারে বিভিন্ন দলগুলির উন্নতি এবং তাদের রাজনীতি (আরো পড়ুন)
- মুঘল আমলে সেচ ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
-----------------------------