হরপ্পা সভ্যতার প্রাচীনত্ব

1920 এর দশকের গোড়ায় বর্তমান পাকিস্তান ও তৎকালীন ভারতবর্ষের অন্তর্গত হরপ্পা ও মহেঞ্জোদাড়োর খনন কার্যের ফলে একটি নতুন সভ্যতার কথা ভারতবাসী তথা বিশ্ববাসীর দৃষ্টি গোচর হয়। খনন কার্যের ফলে বোঝা সম্ভব হয় যে, এই প্রাচীন সভ্যতা ছিল তাম্র প্রস্তর যুগের একটি নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা। 

পরবর্তীকালে পণ্ডিতদের গবেষণার পরিপেক্ষিতে প্রমাণিত হয় যে, সিন্ধু সভ্যতা বা হরপ্পা সভ্যতা বিন্যস্ত ছিল তিনটি পর্যায়ে। এগুলি হল যথাক্রমে- হরপ্পা সভ্যতার আদি পর্ব বা প্রাক পরিনিত পর্ব, পরিণত বা বিকশিত পর্ব যা নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা এক পর্যায়ে পরে এবং হরপ্পার পরবর্তী পর্ব যা নগরকেন্দ্রিক হরপ্পা সভ্যতার ধ্বংসের পরেও ভারতে কিছু কিছু প্রান্তরে বিরাজমান ছিল।
হরপ্পা সভ্যতার প্রাচীনত্ব

হরপ্পা সভ্যতার আবিষ্কারের সময় থেকে পন্ডিত মহলে এর প্রাচীনত্ব বা এই সভ্যতা কতদিনের পুরোনো - সেই বিষয়ে আলোচনা ও বিশ্লেষণ শুরু হয়ে যায়। সমসাময়িক পুরাতাত্ত্বিক বা পণ্ডিতরা এই সভ্যতাকে বহুদিনের প্রাচীন সভ্যতা বলে অনুমান করেন। বিশুদ্ধ অনুমানের ভিত্তিতে স্যার জন মার্শাল 1931 A.D তে মহেঞ্জোদারোর প্রাপ্ত নিদর্শন এর উপর ভিত্তি করে সিন্ধু সভ্যতার কাল নির্ণয় করেন আনুমানিক 2350 B.C - 2750 B.C এর মধ্যে। পরের বছর অপর পুরাতাত্ত্বিক সি. জে. গ্যাট মেসোপোটেমিয়ার কয়েকটি প্রত্নক্ষেত্রে প্রাপ্ত সিলমোহরের সঙ্গে হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোর সীলমোহর এর সাদৃশ্য লক্ষ্য করে এই সময় কাল নির্ণয় করেন আনুমানিক 2350 B.C - 1770 B.C এর মধ্যে। এরপর 1950 A.D তে স্টুয়াট পিগট একই পদ্ধতি অবলম্বন করে এই সভ্যতার কাল নির্দিষ্ট করেন 2500 B.C - 1500 B.C অব্দের মধ্যে। মর্টিমার হুইলার মেসোপটেমিয়ার সাক্ষের উপর ভিত্তি করে এই সভ্যতার কাল নির্ণয় করেন 2300 - 2000 B.C এর মধ্যে।

হরপ্পা সভ্যতার প্রাচীনত্ব

স্বাধীনতার পর্বে বিশেষ করে 1960 এর দশক থেকে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে হরপ্পা সভ্যতার নির্ণয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। রেডিও কার্বন 14 পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে W.A. Fairservice হরপ্পা সভ্যতা কার নির্ণয়ের প্রথমে গুরুত্ব আরোপ করেন। 

"বোম্বাইয়ের টাটা ইনস্টিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ"- এর গবেষণাগারে রেডিও কার্বন 14 পদ্ধতিতে পরীক্ষা চালিয়ে হরপ্পা সভ্যতার সময়কালকে 2300 খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে 1750 খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ করেছেন, তার প্রদত্ত এই তত্ত্ব  বেশিরভাগ ঐতিহাসিক কর্তৃক স্বীকৃত হয়েছে।

বস্তুতপক্ষে হরপ্পা সভ্যতার প্রাচীনত্ব সংক্রান্ত যে তথ্যের উপর আলোচিত হয়েছে তাকে চূড়ান্ত বলে মেনে নিতে অবশ্যই আপত্তি আছে। সাম্প্রতিককালে রোমিলা থাপার, B.N. Mukharjee, রণবীর চক্রবর্তীউপিন্দার সিং প্রমূখ তাদের গবেষণায় দেখানোর চেষ্টা করেছেন যে, 3300 B.C থেকে 2600 B.C পর্যন্ত সময়কালটি ছিল সিন্ধু সভ্যতা তথা হরপ্পা সভ্যতার প্রাক্ পরিণত পর্ব। উল্লেখ্য যে, ওই সময়কালে হরপ্পা, মহেঞ্জোদারো তথা ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম ভাগ গ্রামীণ সংস্কৃতি থেকে উন্নত নগরকেন্দ্রিক সংস্কৃতির দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। সুতরাং খুব স্বাভাবিকভাবেই পরিণত বা নগরকেন্দ্রিক হরপ্পার সভ্যতার উর্ধ্বসীমা 2600 B.C হওয়ায় বাঞ্ছনীয়।


তথ্যসূত্র

  1. সুনীল চট্টোপাধ্যায় "প্রাচীন ভারতের ইতিহাস"।
  2. Upinder Singh, "A History of Ancient and Early Medieval India: From the Stone Age to the 12th Century".

সম্পর্কিত বিষয়

  1. রেনেসাঁ ও মানবতাবাদ  (আরো পড়ুন)
  2. ঋক বৈদিক যুগ এবং পরবর্তী বৈদিক যুগের ধর্মীয় ভাবনা (আরো পড়ুন)
  3. বৈদিক এবং ঋক বৈদিক যুগে প্রশাসনিক ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)
  4. প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য  (আরো পড়ুন
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো। আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন।
                     .......................................
    নবীনতর পূর্বতন
    👉 আমাদের WhatsApp Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
    
        
      
      👉 আমাদের WhatsApp Channel- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
    
    
      
    
       
    
        👉 আমাদের Facebook Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
    
    
      
    
       
      
      
        👉 আমাদের Facebook Page-ক্লিক করুন 🙋‍♂️
    
    
        👉আমাদের YouTube চ্যানেল - সাবস্ক্রাইব করুন 👍 
    
    
    
    
        
      
    
      
    
    

    টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য

    
    

    টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য


     


     




    
    

    👉নীচের ভিডিওটি ক্লিক করে জেনে নিন আমাদের ওয়েবসাইটের ইতিহাস এবং বিভিন্ন চাকুরী সম্পর্কিত পরিসেবাগুলি 📽️

    
    
    

    👉 জেনে আপনি আমাদের প্রয়োজনীয় পরিসেবা 📖

    👉ক্লিক করুন 🌐