পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

মাত্র 15 মাসের রাজত্বকালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে সিরাজের সম্পর্ক অবনতি ঘটে। উভয়ের সম্পর্কে চরম পরিনিতি ছিল পলাশীর যুদ্ধ

মীর কাসিম অযোধ্যার নবাব সুজা-উদ-দৌলা এবং মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম এর মিলিত জোটের সঙ্গে ক্লাইভের ইংরেজ বাহিনী বক্সার প্রান্তরে যে যুদ্ধ বাঁধে, তা বক্সার যুদ্ধ নামে পরিচিত।

পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল


পলাশীর যুদ্ধ অপেক্ষা বক্সারের যুদ্ধ অধিক গুরুত্বপূর্ণ কেন

1757 খ্রিস্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলায় ইংরেজ আধিপত্যের যে বীজ রোপিত হয় তা 1764 খ্রিস্টাব্দে বক্সার যুদ্ধে বিজয়ের ফলে সেই বীজ শুদ্ধ অঙ্কুরিত হয়নি, যথেষ্ট পল্লবীত হয়েছিল। বস্তুতপক্ষে আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক এবং সামরিক সমস্ত দিক থেকে পলাশী যুদ্ধ অপেক্ষায় বক্সারের যুদ্ধ সহস্র যোজন এগিয়ে ছিল।


পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধের তুলনামূলক আলোচনা

১) রাজনৈতিক গুরুত্ব

পলাশী যুদ্ধের ফলে বাংলায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল মাত্র। কিন্তু বক্সার যুদ্ধে মিত্র জোটকে পরাজিত করার পর কেবলমাত্র বাংলা সুবা নয়, সমগ্র উত্তর ভারতের কোম্পানির রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

ঐতিহাসিক জেমস স্টিফেন্স লিখেছেন যে, ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য স্থাপনে পলাশী যুদ্ধের অপেক্ষায় বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব অনেক বেশি।

২) বাংলায় কোম্পানির সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা

পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভের পর বাংলায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সূচনা ঘটে। বাংলার নবাবকে পুতুল নবাবে পরিণত করে। বাংলার রাজনীতির প্রকৃত নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠে কোম্পানি। বক্সারের যুদ্ধ মীরকাশিম আলি খান পূর্ব ভারতে এক স্বাধীন রাজ্য গড়ে তোলার জন্য বদ্ধপরিকর ছিলেন।

৩) সামরিক গুরুত্ব

পলাশীতে কূটনীতি ও বিশ্বাসঘাতকতা এক অনভিজ্ঞ নবাবের ওপর জয়যুক্ত হয়। কিন্তু বক্সারের যুদ্ধে ভারতীয় সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার চরম ব্যর্থতা এবং ইংরেজদের সামরিক বলে শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় পাওয়া যায়।

ঐতিহাসিক স্মিথ লিখেছেন –“পলাশী ছিল কয়েকটি কামানের লড়াই, কিন্তু বক্সার ছিল চূড়ান্ত বিজয়"।

৪) অর্থনৈতিক গুরুত্ব 

পলাশীর যুদ্ধের পর বাংলা থেকে সম্পদ লুণ্ঠনের যে ক্ষীণ ধারা পরিলক্ষিত হয়, বক্সারের বিজয়ের পর তা স্রোতস্বীনিতে পরিণত হয়। 

৫) প্রশাসনিক গুরুত্ব

ঐতিহাসিক  র‍্যামসে ম্যু-র লিখেছেন –“বক্সার বাংলার ওপর কোম্পানির শাসনের শৃংখল চূড়ান্তভাবে স্থাপন করে"। বস্তুতপক্ষে পলাশীর যুদ্ধের বিজয়ের পর থেকেই কম্পানির বাংলা সুবায় সিংহাসনে পশ্চাতে প্রকৃত শক্তিতে পরিণত হলেও কোম্পানির এই বিপুল ক্ষমতার কোনো আইনগত ভিত্তি ছিল না।

৬) অর্থনৈতিক লন্ঠনের সূচনা

পাশাপাশি ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ বাবদ অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা কাছ থেকে 50 লক্ষ টাকা আদায় করা হয়।

৭) সাম্রাজ্যবাদী প্রতিদ্বন্দ্বীতা

পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের বিজয়ের পরেও ভারতে ফরাসি ও অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তিগুলি সক্রিয় ছিল। কিন্তু বক্সারের প্রান্তের ইংরেজের বিজয়ের পর ভারতীয় রাজনীতির রঙ্গ মঞ্চ থেকে তারা ক্রমশ বিদায় নিতে থাকে। বক্সারের সুদূর প্রসারী ভারতের কোম্পানির ক্ষমতা অপ্রতিহত হয়ে ওঠে।


উপসংহার

পলাশীর যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে ব্রিটিশ ইন্ডিয়া কোম্পানি তার ঔপনিবেশিক শাসনে প্রথম ধাপ অতিক্রম করে। তাঁরা চাঁদের মতে পলাশীর জয় ভারতের দুর্বলতাকে স্পষ্ট করে।

বক্সারের যুদ্ধের পরেই বণিকের মানদণ্ড শাসকের রাজদণ্ডরূপে দেখা গিয়েছিল। বক্সারের যুদ্ধে জেতার পর থেকে ভারতের ইতিহাসের প্রকৃতপক্ষে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সূচনা হয়।


কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

👉 পলাশীর যুদ্ধের পর বাংলার নবাব কে হন ?

উত্তর- মীরজাফর ।


👉 পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজ সেনাপতি কে ছিলেন ?

উত্তর- লর্ড ক্লাইভ ।


👉 পলাশীর যুদ্ধ কোথায় হয়েছিল ?

উত্তর- নদীয়া জেলার সদর শহর কৃষ্ণনগরের প্রায় 50 কিলোমিটার উত্তরে ভাগীরথীর নদীর তীরে অবস্থিত এই গ্রামটির পলাশীর নামক স্থানে পলাশী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।


👉 পলাশীর যুদ্ধ কবে কাদের মধ্যে হয়েছিল ?

উত্তর- 1757 খ্রিস্টাব্দে 23 শে জুন বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলা এবং কলকাতার ইংরেজ কতৃপক্ষের মধ্যে পলাশী যুদ্ধ হয়েছিল। 


👉 বক্সারের যুদ্ধ কবে কাদের মধ্যে হয়েছিল ?

উত্তর- 1764 খ্রিস্টাব্দে বাংলার পলাতক নবাব মীর কাসিম ও তার সহযোগী অযোধ্যার নবাব সুজা-উদ-দৌলা এবং দিল্লি মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম এর সম্মিলিত বাহিনী সঙ্গে ইংরেজ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর বক্সারের যুদ্ধ সংঘটিত হয়।


👉 বক্সারের যুদ্ধে ইংরেজ সেনাপতি কে ছিলেন ?

উত্তর- মেজর হেক্টর মনরো ।


👉 বক্সারের যুদ্ধের সময় মুঘল সম্রাট কে ছিলেন ?

উত্তর- দ্বিতীয় শাহ আলম ।


👉 বক্সারের যুদ্ধের সময় বাংলার নবাব কে ছিলেন ?

উত্তর- মীর জাফর আলী খান ।


👉মীর জাফরের শাসনকালে কোন তিনটি বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল ?

উত্তর- মেদিনীপুরের রাজারাম সিংহ, পূর্ণিয়ার হজর আলি খাঁ, অচল সিংহ এবং পাটানায় রামনারায়ণের বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু এর মধ্যে প্রধানত মীর জাফর প্রথম দুইটি বিদ্রোহ দমন করেছিলেন।


তথ্যসূত্র

  1. সুমিত সরকার, "আধুনিক ভারত"।
  2. শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়, "পলাশি থেকে পার্টিশন"।
  3. Ishita Banerjee-Dube, "A History of Modern India".

লেখিকার পরিচিতি

নাম- অলিভিয়া সরকার
কলেজের নাম- নেতাজি মহাবিদ্যালয়
(২ সেমিস্টার, ইতিহাস অনার্স)
ঠিকানা- আরামবাগ, তিরোল,
পিন কোড- ৭১২৬০২


সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো। আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন।
                     .......................................


    নবীনতর পূর্বতন
    👉 আমাদের WhatsApp Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
    
        
      
      👉 আমাদের WhatsApp Channel- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
    
    
      
    
       
    
        👉 আমাদের Facebook Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
    
    
      
    
       
      
      
        👉 আমাদের Facebook Page-ক্লিক করুন 🙋‍♂️
    
    
        👉আমাদের YouTube চ্যানেল - সাবস্ক্রাইব করুন 👍 
    
    
    
    
        
      
    
      
    
    

    টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য

    
    

    টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য


     


     




    
    

    👉নীচের ভিডিওটি ক্লিক করে জেনে নিন আমাদের ওয়েবসাইটের ইতিহাস এবং বিভিন্ন চাকুরী সম্পর্কিত পরিসেবাগুলি 📽️

    
    
    

    👉 জেনে আপনি আমাদের প্রয়োজনীয় পরিসেবা 📖

    👉ক্লিক করুন 🌐