সিকান্দার শাহের রাজপ্রাসাদ

মালদা জেলায় গাজোল ব্লকের অন্তর্গত আদিনা নামক স্থান আদিনা মসজিদের পূর্ব দক্ষিণ কোণে জাতীয় সড়কের অনতিদুরে একটি  ইস্ট নির্মিত উঁচু মিনার লক্ষ্য করা যায়। জনশ্রুতি অনুযায়ী এই অঞ্চলটি বাংলার সুলতান সিকান্দার শাহের রাজধানী ফিরোজ আমাদের অন্তর্গত সিকান্দারের রাজপ্রাসাদ নামে পরিচিত। তবে উত্তর দক্ষিণ বিস্তৃত এই অঞ্চলের দিঘী দেখে অনুমান করা যায় যে সিকান্দার নন ইলিয়াস শাহী বংশের বহু পূর্বে সম্ভবত প্রাচীন হিন্দুর রাজাদের রাজত্বকালে এই অঞ্চল বাসান কেন্দ্র ও বাধিষ্ণুর জনপদ ছিল। 


সিকান্দার শাহের রাজপ্রাসাদ


∆ ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে description of dimpur (P-47-48) বুকানন হ্যাসিলটন গ্রন্থে এই অঞ্চলের দালান কোঠা সম্পর্কে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে হ্যাসিলটনের বর্ণনায়  উদ্ভূদ্ধ হয়ে ক্যানিংহোম এই অঞ্চল পরিদর্শন করেন। তবে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে প্রথম পরিত্যাগ পরিপূর্ণ ভগ্ন এই রাজপ্রাসাদের চৌহদ্দির উত্তরপূর্ব অংশের পুঙ্খানুপুঙ্খ জরিপ করেছিলেন স্টেপলটন সাহেব।হ্যাসিলটন বর্ণিত ধ্বংসাববৈশিষ্ট্য "সাতাশঘর বা  ষষ্ঠ গম্বুজ" বলে পরিচিত। ১২০×৬০ গজে বিস্তৃত প্রসাদ চত্বরের পশ্চিম দিকে সউচ্চ দেয়াল লক্ষ্য করা যায়। যার উচ্চতা ১৬ ফুট সম্ভবত এই দেয়াল চতুর্দিকে বোষ্টিত ছিল। এবং এই দেয়াল বোষ্টিত অংশেই ভবনাদী ছিল। দেওয়ালের নিজের অংশে নালো লক্ষ করা যেত সম্ভবত বৃষ্টির জল প্রাসাদের বাইরে বের করার ব্যবস্থা ছিল।



∆ উত্তর পশ্চিমে একটি অট্টালিকা লক্ষ্য করা যায় এর কেন্দ্রস্থলে খিলান যুক্ত একটি প্রকোষ্ঠ রয়েছে।  ২৪ ফুট বাঁশের অট্টালিকা টির আটটি কোণে আটটি ক্ষুদ্র কক্ষ আছে। এর মধ্যে ২৫ ফুট × ৭ ফুটের  আয়তকারের একটি কক্ষ এবং উত্তর-পশ্চিমে একটি পৃথক ১১ টি ফুটের বর্গাকার কক্ষ দেখা যায়। প্রকৃতপক্ষে এটি একটি তুর্কি "গোসলখানা বা হাসাস বা স্নাগার"। ভবনটিটি চুন সুর কি ছাড়াও মিনা করা ইট ও ব্যবহৃত হয়। এই অঞ্চলের বেশিরভাগ সবুজ রঙের মিনা করা ইটের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। সবুজ শব্দটি ফারসি ভাষায় ফিরোজ বলা হয়। সম্ভবত প্রাসাদ চত্বর বা এই এলাকায় সবুজের আধিক্য ছিল বলেই রাজধানীর নামকরণ হয় ফিরোজাবাদ। ক্ষুদ্র কক্ষ গুলো থেকে শুধু মধ্যবর্তী প্রকোষ্ঠে যাওয়া আসার দরজা ছিল এবং একটি পথ সামনের দিকে বাইরে যাওয়ার প্রকোস্ট পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। সমগ্র স্নাগার দেওয়াল জুড়ে পোড়া মাটির তৈরি জলবাহিত নালা লক্ষ্য করা যায়। পার্শ্ববর্তী অর্জুন দিঘির উত্তর পাড় জুড়ে সমপাকা গাঁথুনি রয়েছে এবং খিলান গেছে ও মজবুত করা হয়েছে। এই গাঁথুনি থেকে দেখি জল পর্যন্ত সিঁড়ি নেমে গেছে এবং তার উপর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কয়েকটি কক্ষ ছিল বলে মনে হয়। এসব কক্ষ প্রখণ্ড ভগ্নস্তুপ তথা জঙ্গলাকির্ন। 


সিকান্দার শাহের রাজপ্রাসাদ


ইলিয়াস শাহী বংশে প্রতিষ্ঠাতা বাংলা সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ দিল্লির 'ফৌজি-ই-সামসি' নির্মাণ করেন। সম্ভবত আদিনায় অবস্থিত এই স্নাগারটি ইলিয়াস শাহ কর্তৃক নির্মিত তুর্কি গোসলখানা। এই গোসলখানা নির্মাণে সুলতান বাংলাদেশ (পান্ডুয়া) অভিযানে অন্যতম কারণ ছিল বলে মনে করা হয়। 



∆ অর্জুন দিঘির পূর্ব দক্ষিণ কোন থেকে সামান্য দূরে স্নাগারের মতো আর একটি দালান রয়েছে। জনশ্রুতি অনুযায়ী এটি "পাণ্ডব রাজ দালান"। কথিত আছে মহাভারতের পান্ডবগণ অঙ্গাত বাসে থাকাকালীন এই দালানটি নির্মাণ করেন। এবং তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুন তীর  নিক্ষেপ করে পার্শ্ববর্তী উত্তর দক্ষিণে বিস্তৃত দিঘিটি খনন করে বলে তার নাম অর্জুনদিঘী। রিদেন তার 'গোন্ড' গ্রন্থেও এই কিংবদন্তির উল্লেখ পাওয়া যায়। যদিও প্রকৃত দালানটি প্রকৃত কালের তবে সম্ভবত এটিও স্নাগার ছিল। ইট দিয়ে পাকা করা একটি গোলাকার কুয়োর মতো গর্ত দালানের উপর থেকে নিচের দিকে নেমে গেছে। এ একুর পরিধি ১০ ফিট। স্থানীয় লোকেরা একে "জীবনকুন্ড" বা "জিওত কুন্ড' বলে অভিহিত করে থাকে। সম্ভবত স্নাগারে জলে সরবরাহের উদ্দেশ্যে এই কুয়ো ব্যবহৃত হতো। এই দালান ইটের তৈরি। খুব কম এবং সাধারণ মানের পাথর ব্যবহৃত হলেও ইতন্তত বিক্ষিপ্ত কিছু সবুজ মিনা করা ইট লক্ষ্য করা যায়। 

সিকান্দার শাহের রাজপ্রাসাদ


∆ প্রাসাদ অঞ্চলের পশ্চিম দিকে প্রাচীরের "মিনার" নামে পরিচিত একটি স্তম্ভ রয়েছে। প্রাসাদের পশ্চিম দিকে প্রবেশদ্বার বা সিংহ দরজা বলে সম্ভবত এই মিনারের অস্তিত্ব। মিনালটি প্রধান ফটকের ২ স্তম্ভের একটি। তবে মিনারের পাশের উঁচু স্থান খনন করলে গোনা যাবে সত্যিই  সিংহ দরজার আর কটি মিনার ছিল কিনা, নাকি এটি একটি মসজিদের অংশবিশেষ। 



∆ স্থানটির নাম "সাতাইশ ঘর" বা 'হ্যামিলটন" বর্ণিত "সাতাইশ ঘর" যাই হোক না কেন তবে নামটি সন্দেহজনক। কারণ প্রদত্ত অঞ্চলে ২৭ টি গড়, নাকি ২৭ টি ঘর বা অট্টলিকা , নাকি ২৭ টি পরিবার বসবাস করত অর্থাৎ সঠিক কি কারনে এরূপ নামকরণ অজানা যাই না। তবে স্থানীয় হিন্দু মুসলিম সকলেই একথা বলে থাকে যে এই জায়গায় বহু আগে পান্ডুয়া রাজা নামে এক হিন্দু রাজা ছিলেন এবং এই জায়গা তারই নাম অনুসারে হয়েছে। পেশুয়া নামটি স্বীকৃত উচ্চারণ ও নগরীর সঠিক নাম হবে "পান্ডুয়া" বা "পান্ডব্যা"।

............. সমাপ্তি...........


✍️লেখক পরিচিতি

নাম- দীপঙ্কর দাস
শিক্ষকতার স্থান- সহশিক্ষক, নরহাট্টা গোপেশ্বর সাটিয়ার উচ্চ বিদ্যালয় (উ:মা:)



👉 তথ্যসূত্র

  1. বাঙ্গালীর ইতিহাস (আদি পর্ব)- নীহাররঞ্জন রায়।
  2. MEMOIRS OF GOUR AND PANDUA - ABID ALI KHAN.
  3. মালদহ: ইতিহাস-কিংবদন্তী-সুস্মিতা সোম।
  4. মালদহ জেলার ইতিহাস- প্রদ্যোত ঘোষ।
  5. ভারতের ইতিহাস, তুর্ক- আফগান যুগ (১২০০-১৫০৬)- গৌরীশংকর দে।
  6. ভারত ইতিহাস পরিক্রমা - শ্রী প্রভাতাংশু মাইতি।

      ✍️সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো। আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন🙏।
                    .......................................


      নবীনতর পূর্বতন
      👉 আমাদের WhatsApp Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
          
        
        👉 আমাদের WhatsApp Channel- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
        
      
      
        
      
         
      
          👉 আমাদের Facebook Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
        
      
      
        
      
         
        
        
          👉 আমাদের Facebook Page-ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
      
          👉আমাদের YouTube চ্যানেল - সাবস্ক্রাইব করুন 👍 
      
      
      
      
          
        
      
        
      
      

      টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য

      
      

      টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য


       


       




      
      

      👉নীচের ভিডিওটি ক্লিক করে জেনে নিন আমাদের ওয়েবসাইটের ইতিহাস এবং বিভিন্ন চাকুরী সম্পর্কিত পরিসেবাগুলি 📽️

      
      
      

      👉 জেনে আপনি আমাদের প্রয়োজনীয় পরিসেবা 📖

      👉ক্লিক করুন 🌐