ঊনবিংশ শতকে নারী সংক্রান্ত সমস্যা

উনিশ শতকের বাংলায় ধর্মীয় এবং সমাজ সংস্কার আন্দোলনের ক্ষেত্রে নারী মুক্তি প্রশ্নটি, শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে খুব সামান্য ভাবে আলোচনা করা হয়েছিল। রামমোহন রায় এবং সতী আন্দোলন(আরো পড়ুন), বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ আন্দোলন(আরো পড়ুন) এবং কুলীন ব্রাহ্মণদের বহুবিবাহ বিরোধী আন্দোলন, নব্যবঙ্গদের অতি আধুনিকতার এবং ব্রাহ্ম আন্দোলন প্রভৃতি বিশেষভাবে নারী সংক্রান্ত বিষয়টির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল।

এই শতকের শেষের দিকে চিরাচরিত মতাদর্শ, মূল্যবোধ সম্পর্কে সংঘাত সমকালীন সাহিত্য, বিশেষ করে বঙ্কিমচন্দ্রের বিষবৃক্ষ এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চোখের বালি এবং  গোরাতে ব্যক্ত হয়। এছাড়া বাংলার নবজাগরনে উপর রচিত অসংখ্য রচনার মধ্য দিয়ে নারী মুক্তি বিষয়টির ঝলক দেখা যায়। উনিশ শতকে বৌদ্ধিক শ্রেণী নারী মুক্তি সংক্রান্ত প্রশ্নটিকে একটি নির্দিষ্ট সময় তুলে ধরে।

উনবিংশ-শতকে-নারী-সংক্রান্ত-বিষয়


উনিশ শতকের নারী শিক্ষা বিস্তার

পাশ্চাত্য প্রভাব এবং ইংরেজ ঘরনায় ইংরেজি শিক্ষিত গোষ্ঠী প্রকৃতপক্ষে ভারতে আধুনিকতার বিকাশের সাহায্য করেছিল, তবে এটি একটা সাধারণ ব্যাখ্যা। যদিও মনে রাখতে হবে যে- ইংরেজি পাঠ্যপুস্তক, সাহিত্য  এবং কোন কোন ক্ষেত্রে বিদেশ ভারতীয়দের মধ্যে বহিঃবিশ্ব সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। বিভিন্ন কবিতা এবং উপন্যাসগুলিতে রোমান্টিক প্রেম ও বিধবাদের দাহ না করার কথা এবং বহু বিবাহের বিরুদ্ধে তুলে ধরা হয়েছিল। জন স্টুয়ার্ট মিলের নারী বিষয়ে রচনায় বাংলার বহু পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল, এছাড়া মিশনারিদের প্রচেষ্টার কথাও উল্লেখ করতে হয়।

উনিশ শতকে ইউরোপে মেয়েদের সমস্যা নিয়ে কার্যকলাপ সম্পর্কে ভারতীয় বুদ্ধিজীবী শ্রেণী বেশ কিছুটা সচেতন হয়ে উঠেছিল। খ্রিস্টান মিশনারীরা মূর্তি পূজা এবং বহু দেব-দেবীর আরধনা, জাত-পাত প্রভৃতি বিরুদ্ধে তীব্র প্রচার এবং নিম্ন জাতিভুক্ত মানুষ ও উপজাতিদের মধ্যে তাদের কাজ নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। রামমোহনের সময় থেকে 1870 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বেশিরভাগ দেশাত্মবোধক উদারনৈতিক আন্দোলন ছিল পুরুষ প্রভাবিত।

উনবিংশ শতকে আমরা দেখতে পেলাম নারী সংক্রান্ত প্রশ্নটি আলোচনার মধ্যে সামান্য অংশে স্থান পেয়েছে। একথা সত্য যে, বিক্ষিপ্তভাবে নারী আন্দোলনের কিছুটা উদাহরণ বাংলাদেশ পাওয়া গেলেও মেয়েরা ছিল অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুরুষ পরিচালিত এবং সংস্কার আন্দোলনের পরোক্ষ ভূমিকাতে। 1935 খ্রিস্টাব্দে 28 শে মার্চ সমাচার দর্পণ একটি চিঠি প্রকাশ করে- তাতে দেখা যায়, চুঁচুড়ায় নারী শিক্ষা ও বহুবিবাহ নিষিদ্ধ এবং নিজেদের পছন্দের মত বিবাহের কথা বলে।


উনিশ শতকে নারী সাহিত্যিক

মহেশচন্দ্র দে তাঁর প্রবন্ধে নারী সংক্রান্ত বিষয়ে উনিশ শতকে তাদের সচেতনতার কথা উল্লেখ করেছেন। মহেশচন্দ্র বাল্যবিবাহ,  বহুবিবাহ, বিধবা বিবাহ প্রভৃতির সমালোচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বহু কবিতাতে স্ত্রীকে স্বামী যে পুতুল হিসেবে দেখেছেন, তা তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন। উনিশ শতকের সমাজ সংস্কারক ছিলেন পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় লালিত-পালিত। সেই কারণে তাদের সমাজ সংস্কারমূলক কাজগুলি ছিল অধিকাংশ সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন।

উনবিংশ-শতকে-নারী-সংক্রান্ত-বিষয়
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


উনবিংশ-শতকে-নারী-সংক্রান্ত-বিষয়
গান্ধীজী

আবার একদিকে কৃষ্ণমোহন ব্যানার্জির নাটকে ব্রাহ্ম আন্দোলনের শিক্ষার প্রচেষ্টা এবং তার সীমাবদ্ধতা, স্ত্রীদিগের মুক্তি ও নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে সমালোচনা করেছেন। তার মধ্যে সংস্কার আন্দোলনগুলি ছিল, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিজেদের আত্মীয়-স্বজন কেন্দ্রিক। উনবিংশ শতকে মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবী সমাজ সংস্কারকদের নারী সংক্রান্ত প্রশ্ন এবং সমাজ সংস্কারের বিষয়টি গুরুত্ব হ্রাস পাই জাতীয়তাবাদের উদ্ভবের সাথে সাথে। জাতীয়তাবাদে ধর্মীয় প্রভাব বৃদ্ধি , গান্ধীজীর ভূমিকা, আত্ম-নিবেদনের ডাক এবং অনশন প্রভৃতি চিরাচরিত হিন্দু সম্প্রদায়কে অনেকাংশই এগিয়ে দিয়েছিল। এরফলে রক্ষণশীল পরিবারের মেয়েরা রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে শুরু করে।


উনিশ শতকের সমাজ সংস্কার আন্দোলন

উনবিংশ শতকের সংস্কার আন্দোলনের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, এই সময় সংস্কার আন্দোলনের  উদ্যম এসেছিল উচ্চ শিক্ষিত ভদ্রলোকের কাছ থেকে।  তাই সংস্কার আন্দোলন আবদ্ধ ছিল উচ্চশ্রেণীর সামাজিক ত্রুটিগুলিকে দূর করার ক্ষেত্রে, যেমন- সতীদাহ, বিধবা বিবাহ, কুলীন প্রথা প্রভৃতি। এই সমাজ সংস্কারের আরেকটি রূপ ছিল যে, শাস্ত্র থেকে উদ্বৃত্ত নিয়ে মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা, তবে এটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।

এই সময় সংস্কার আন্দোলনের কতগুলি দিক ছিল, যেমন- প্রথম প্রজন্মের সংস্কারকরা তাদের রক্তের সম্পর্ক ভঙ্গ করেছিল, যৌথ পরিবার থেকে একান্নবর্তী পরিবারে সূত্রপাত হয়েছিল। এটা মনে রাখতে হবে যে, প্রথমে তাদের পক্ষে পিতৃতান্ত্রিক কর্তৃত্বকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা, ধর্ম এবং সামাজিক নিয়মকে ছিন্ন করা সম্ভব ছিল না।

উনবিংশ-শতকে-নারী-সংক্রান্ত-বিষয়
কৃষক

আবার একদিকে শিবনাথ শাস্ত্রী ছিলেন ব্রাহ্ম আন্দোলনের প্রকৃত প্রগতিশীল নেতা।  তিনি লিঙ্গ এবং বর্ণবৈষম্য বিরোধী কথা বলেন, পাশাপাশি তিনি ইংরেজ মহিলাদের শৃঙ্খলা পূর্ণ স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করেন। তবে মনে রাখতে হবে, শ্রমিক-কৃষক এবং নিম্নবর্ণের মানুষদের মধ্যে সংস্কারের প্রচেষ্টা ছিল খুবই কম, দুই-একটা ক্ষেত্র বাদ দিয়ে উদাহরণ হিসেবে ব্যানার্জি কথা উল্লেখ করা যায়।
   
উনবিংশ শতকের সাহিত্য অংশ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, কোন কোন ক্ষেত্রে নারী শক্তির ঝলক দেখা যায়, যেমন-মধুসূদনের মেঘনাদবধ কাব্যে  প্রমীলা চরিত্র, বঙ্কিমচন্দ্রের  বিভিন্ন নারীর চরিত্র প্রভৃতি। 

আলোচনা শেষে আমরা বলতে পারি, বিংশ শতকের নারী সংক্রান্ত প্রশ্নটি উনবিংশ শতকের ধর্ম ভেদ করে অধিকাংশ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল।


সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ| আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো| আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন|
              ......................................................

নবীনতর পূর্বতন
👉 আমাদের WhatsApp Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️

    
  
  👉 আমাদের WhatsApp Channel- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
  


  

   

    👉 আমাদের Facebook Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
  


  

   
  
  
    👉 আমাদের Facebook Page-ক্লিক করুন 🙋‍♂️

    👉আমাদের YouTube চ্যানেল - সাবস্ক্রাইব করুন 👍 


    
  

  

টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য


টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য


 


 





👉নীচের ভিডিওটি ক্লিক করে জেনে নিন আমাদের ওয়েবসাইটের ইতিহাস এবং বিভিন্ন চাকুরী সম্পর্কিত পরিসেবাগুলি 📽️



👉 জেনে আপনি আমাদের প্রয়োজনীয় পরিসেবা 📖

👉ক্লিক করুন 🌐