ভক্তি আন্দোলন

দীর্ঘ তিন শত বছরের সুলতানি শাসনে ভারতের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। তাই তৎকালীন হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতিকে সর্বপ্রথম এক বিধর্মী ও বৈদেশিক সংস্কৃতি এসে আঘাত করে। শাসক যখন বিদেশি ও বিধর্মী, তখন মানুষের ধারণার পরিবর্তনের পাশাপাশি দুটি ধর্ম একে অপরের সংস্পর্শে আসার ফলে দুই ধর্মের মধ্যেই নানা সংস্কার ঘটে। হিন্দু ধর্মের ক্ষেত্রে এরকম এর সংস্কার ছিল ভক্তিবাদ।

ভক্তিবাদের মূলকথা হলো, "আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলন"- অর্থাৎ মানুষের সঙ্গে ঈশ্বরের মিলন। ভক্তিবাদের উদ্ভব সম্পর্কে পন্ডিত মহলে নানা মতবাদ বিদ্যমান। অধ্যাপক তারা চাঁদ, ইউসুফ হোসেন, অধ্যাপক কুরেশি প্রমুখ ঐতিহাসিকদের মতে ইসলাম থেকে হিন্দু ধর্মে ভক্তির প্রবেশ ঘটেছে। তাদের মতে ইসলামের একেশ্বরবাদ, ভ্রাতৃত্ববোধ, মানবতাবাদ ও সামাজিক সাম্যের তত্ত্ব ভক্তিবাদী প্রচারকের প্রভাবিত করেছিল।

এইসব প্রচারকরা মনে করেন যে, বহুদেব-বাদ এবং জটিল আচার-অনুষ্ঠান সর্বস্বোতা ত্যাগ করে একমাত্র ভক্তির মাধ্যমেই ঈশ্বরকে পাওয়া সম্ভব। মুসলমান সুফীসন্তদের প্রচারক ভক্তিবাদ আন্দোলন সংগঠনে সাহায্য করে। সুফিসন্তরা অতীন্দ্রিয়, ভক্তি তত্ত্ব ও নৈতিক আদর্শের উপর জোর দেন। তারা কোরানের পন্ডিতী ব্যাখ্যার অপেক্ষা আল্লাহের প্রতি ভক্তিকেই মুক্তির একমাত্র পথ বলে অভিহিত করেন। সুফীসন্তদের এই উদার দৃষ্টিভঙ্গি হিন্দু ভক্তি আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করে‌।

অন্যদিকে ম্যাক্স ওয়েবার, গ্রিয়ারসন প্রমূখ ইউরোপীয় লেখকগণ মনে করেন, খ্রিস্টান ধর্ম থেকে একেশ্বরবাদ ও ভক্তি ধারণা এসেছে। বার্নেট প্রমুখরা এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে আপত্তি তুলে বলেন যে, দেশীয় উপাদান গুলির মধ্যেই ভক্তি উৎস নিহিত আছে।

ভক্তি আন্দোলন
শ্রীমদ্ভগবদগীতা

ভক্তি আন্দোলন

বলা যায় বৈদিক সাহিত্যই ভক্তিবাদের বীজ খুঁজে পাওয়া যায়। শ্রীমদ্ভগবদগীতায় শ্রীকৃষ্ণ ভক্তিবাদের কথা বলেছেন। হিন্দু ধর্ম শাস্ত্রের মুক্তির তিনটি পথের কথা উল্লেখ আছে, যথা- জ্ঞান, ভক্তি ও কর্ম। বিষ্ণুপুরাণেও ভক্তিবাদের কথা উল্লেখিত আছে। খ্রিস্ট শতাব্দীর সূচনায় মহাযানী বৌদ্ধধর্ম ও পরবর্তীকালে সহযানী বৌদ্ধ ধর্মেও ভক্তির কথা বলা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে খ্রিস্ট সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতকের মধ্যে দাক্ষিণাত্য ভক্তি আন্দোলনের সূচনা হয়। এই প্রসঙ্গে শৈব নায়নার ও বৈষ্ণব আলওয়ার সম্প্রদায়ের নাম স্মরণ করা যেতে পারে। এরা সামাজিক বৈষম্য ও জাতিভেদের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের প্রতি প্রেম ও আদর্শকে তুলে ধরেছেন, এ-শিক্ষায় পরবর্তীকালে ভক্তি আন্দোলনের সূচনা করে।

তবে সুলতানি আমলে ভক্তি আন্দোলনের সূচনা ও ব্যাপক প্রসার লাভের পেছনে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। হিন্দু উচ্চবর্ণের লোকেরা ছিলেন জমিদার বা উচ্চপদস্থ কর্মচারী। অন্যদিকে দরিদ্র কৃষক, কারিগর ও নিম্ন বর্ণের হিন্দু মানুষেরা সামাজিক ও অর্থনৈতিক উভয় দিক থেকে ছিলেন অবহেলিত ও বঞ্চিত। হিন্দু উচ্চবর্ণের ঘৃণা, অবহেলা এবং শাসক মুসলমান সম্প্রদায়ের শোষন ও প্রলভনের স্বীকার হয়ে বহু নিম্নবর্ণের হিন্দু ইসলাম ধর্ম গ্রহণে আগ্রহী হয়ে পড়েছিল। এমত অবস্থায় ধর্মসংস্কারগণ ভক্তিবাদের প্রচার করে ধর্মীয় জটিলতা পরিহার করতে চেয়েছিলেন।


ভক্তিবাদের ধর্ম প্রচারকগণ

ভক্তি আন্দোলনের রামানুজ 

ভক্তিবাদের আদি প্রবক্তাদের অন্যতম ছিলেন রামানুজ। 1017 খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ ভারতের শ্রী পেরামপুদুরে রামানুজের জন্ম। রামানুজ বিশ্বাস করতেন, কর্মের দ্বারা আসক্তি ও মায়ার উদ্ভব হয়। একমাত্র ভক্তিযোগের মাধ্যমেই প্রকৃত মুক্তি লাভ সম্ভব। তিনি জাতিভেদ ও অস্পৃশ্যতা বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান।


ভক্তি আন্দোলনের রামানন্দ

চতুর্দশ শতকের প্রধান ভক্তিবাদ ধর্মগুরু ছিলেন রামানন্দ। তিনি রামানুজের ভাবধারাকে গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন রাম ও সীতার উপাসক। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের কাছে তিনি ভক্তিবাদ প্রচার করতেন। তিনি জাতিভেদ ও অস্পৃশ্যতাকে স্বীকার করতেন না।

ঐতিহাসিক তারাচাঁদ রামানন্দকে দক্ষিণ ভারত ও উত্তর ভারতের ভক্তিবাদী আন্দোলনের সেতুবন্ধন বলে উল্লেখ করেছিলেন‌। বিভিন্ন বর্ণের এমনকি নিম্ন জাতির লোকেরাও তার শিষ্যত্ব গ্রহন করেছিল। তার শিষ্যদের মধ্যে প্রধান ছিলেন কবীর।



ভক্তিবাদী আন্দোলনের নানক

ভক্তিবাদের আরেক প্রধান প্রবক্তা ছিলেন গুরু নানক। তিনি 1469 খ্রিস্টাব্দে লাহোরের কাছে তালবন্দি নামক গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। কবীরের মতোই তিনি মূর্তিপূজা, তীর্থযাত্রা, জাতিভেদ প্রথা ও ধর্মের বহিরঙ্গতার নিন্দা করতেন।
ভক্তি আন্দোলন
শিখ ধর্মের প্রতীক


তার মতে ঈশ্বর লাভের জন্য কখনোই সন্ন্যাস অপরিহার্য নয়। সৎ ও নিরাসক্ত জীবন-যাপন এবং ঈশ্বরের প্রতি অবিচল ভক্তির মাধ্যমে গার্হস্থ্য জীবনে মোক্ষ লাভ সম্ভব। তিনি মনে করতেন, "নাম" বা ঈশ্বরের গুনোগান, "দান" বা জীবনের সেবা এবং "স্নান" বা দেহের শুদ্ধির মাধ্যমেই আধ্যাত্মিক উন্নতি সম্ভব। হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিল। তার শিষ্যরা শিখ নামে পরিচিত।



ভক্তি আন্দোলনে শ্রী চৈতন্য

বৈষ্ণব ধর্মের প্রচারক মধ্যে শ্রীচৈতন্য ছিলেন অন্যতম। নবদ্বীপের এক সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন ধর্ম ভাবাপন্ন। 24 বছর বয়সে তিনি গৃহ ত্যাগ করে সন্ন্যাস ধর্ম গ্রহণ করেন। হিন্দু-অহিন্দু, উচ্চ-নীচ নির্বিশেষে তিনি ভক্তির আদর্শ প্রচার করেন। তাঁর মতে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষই আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারী এবং ভক্তিভাবের মধ্যেই মুক্তিলাভ সম্ভব। তাঁর অগণিত শিষ্যদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন উড়িষ্যার রাজা প্রতাপ রুদ্র দেব, রূপ সনাতন, যবন হরিদাস, শ্রীনিবাস, জীব গোস্বামী সকলেই ছিলেন।



ভক্তি আন্দোলনে মীরাবাঈ

মধ্যযুগের ভক্তিবাদের আন্দোলনের ইতিহাসে রাজপুত কূল গৌরব শিশোদীয়া রাজপরিবারে বধূ মীরাবাঈ ছিল এক উল্লেখযোগ্য নাম। অল্প বয়সে কৃষ্ণ প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে তিনি তিনি রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করেন। তিনি মনে করতেন, ভক্তি ও ভালোবাসা দ্বারায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে লাভ করা যায়।
ভক্তি আন্দোলন
কৃষ্ণ

সঙ্গীতের মাধ্যমে তিনি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে ভক্তি-অর্ঘ নিবেদন করতেন। "মীরার ভজন" নামে পরিচিত তার ভক্তিমূলক গানগুলি আজও ভারতীয় সাহিত্য ও সঙ্গীতের মূল্যবান সম্পদ।



ভক্তি আন্দোলনে কবীর

মধ্যযুগের ভক্তি আন্দোলনে যাদের নাম সবচেয়ে বেশি স্মরণীয় তাদের মধ্যে কবীর ছিলেন অন্যতম (আনু: 1440-1518 খ্রিস্টাব্দ)। কবীরের বাল্য জীবন সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। কিংবদন্তী অনুযায়ী কবীর ছিলেন এক ব্রাহ্মণ বিধবার সন্তান। মা কর্তৃক পরিত্যক্ত হয়ে তিনি নিরু নামে এক মুসলমান তাঁতির ঘরে পালিত হয়। গুরু রামানন্দের কাছে ভক্তি মন্ত্রে দীক্ষিত হবার পর তিনি ধর্মপ্রচারে ব্রত হন।

বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে কোন পার্থক্য তিনি স্বীকার করতেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন শাস্ত্রীয় বিধান, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, তীর্থযাত্রা, পুণ্য স্নান, শাস্ত্র পাঠ বা জাতিভেদ নয়- কেবলমাত্র মনের পবিত্রতা ও আন্তরিকতার মাধ্যমে ভক্তির সাহায্যেই প্রকৃত ধর্ম লাভ সম্ভব। তার মতে, "আল্লাহ্" ও "রাম" একই ঈশ্বরের আলাদা নাম।

হিন্দু-মুসলমান উভয় ধর্মের মানুষ কবীরের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিল এবং তারা কবীর পন্থী নামে পরিচিত হন। দুই লাইনের একেকটি শুল্ক বা দোঁহার মাধ্যমে কবীর অন্তত সহজ-সরলভাবে তার বক্তব্য প্রচার করতেন। কেবলমাত্র আধ্যাত্মিক সম্পদ হিসাবেই নয়- দোঁহাগুলি ছিল হিন্দি সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।



ভক্তি আন্দোলনের প্রভাব ও ফলাফল

ভারতীয় জনজীবনে ভক্তিবাদ সুগভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। কেবলমাত্র সমকালীন ধর্মীয় জীবনে নয়- সমকালীন ও পরবর্তী যুগের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জীবনে ভক্তিবাদের প্রভাব ছিল ব্যাপক।
  1. দীর্ঘদিন ধরে যে হিন্দু-মুসলমান বিভেদ চলছিল ভক্তিবাদের প্রভাবে তার তীব্রতা বহুলাংশে হ্রাস পায় এবং উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হতে থাকে। এই কথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে, পরবর্তীকালে সম্রাট আকবরের উদারনৈতিক নীতির ভিত্তিক এই যুগেই রচিত হয়েছিল।
  2. ভক্তি আন্দোলনের ফলে ভক্তি সমাজে ঐক্য ও সংহতি বৃদ্ধি পায়। অধ্যাপক আশীর্বাদী লাল শ্রীবাস্তব মনে করেন, ভক্তি আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল হিন্দু ধর্মের সংস্কার করে একটি সহজ-সরল রূপ দেওয়া যাতে ইসলাম ধর্মের সাম্যবাদী আহ্বান থেকে নিম্নবর্ণের হিন্দুদের সরিয়ে আনা যায়। বর্ণভেদ প্রথার বিরোধিতা করে সামাজিক সাম্যের আদর্শ প্রচার করে ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের পরিবর্তে সাধন/সহজ পথে ঈশ্বর লাভের তত্ত্ব প্রচার করে ভক্তি মার্গের সাধকরা নিম্ন বর্ণের মানুষের কাছে হিন্দুধর্মকে জনপ্রিয় করতে পেরেছিলেন।
  3. ভক্তি মার্গের সাধকরা স্থানীয় ভাষাতে তাদের উপদেশ দান করতেন, ফলে আঞ্চলিক ভাষাগুলি নবীন মর্যাদায় ভূষিত হয়, বাংলার বৈষ্ণব কবিরা বাংলা ভাষাকে নতুন রূপ দান করেন। নামদেব ও একনাথ এর পদাবলী মারাঠি সাহিত্যকে, কবীরের দোঁহাগুলি হিন্দি সাহিত্যকে এবং নানকের উপদেশ বলী পাঞ্জাবি ভাষা ও গুরুমুখী লিপিকে সমৃদ্ধ করে‌।
সর্বশেষে উল্লেখ করা যেতে পারে, ভক্তিবাদীরা ধর্মপালনের নারী-পুরুষ অবাধ স্বাধীনতা নারীদের ছিল বলে তাদের সামাজিক মর্যাদা পূর্বের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছিল। মহাদেব গোবিন্দ রানাডে মনে করতেন, ভক্তিবাদের প্রভাবে চিন্তা ও কাজের ভারতবাসী অগ্রগতি ও উন্নত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পেরেছিল।


তথ্যসূত্র

  1. অধ্যাপক গোপালকৃষ্ণ পাহাড়ী, "মধ্যকালীন ভারত"।
  2. সতীশ চন্দ্র, "মধ্যযুগে ভারত"।
  3. Shahabuddin Iraqi, "Bhakti Movement in Medieval India: Social & Political Perspectives".

    সম্পর্কিত বিষয়

    সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো। আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন।
                  ......................................................


    নবীনতর পূর্বতন
    👉 আমাদের WhatsApp Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
    
        
      
      👉 আমাদের WhatsApp Channel- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
    
    
      
    
       
    
        👉 আমাদের Facebook Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
    
    
      
    
       
      
      
        👉 আমাদের Facebook Page-ক্লিক করুন 🙋‍♂️
    
    
        👉আমাদের YouTube চ্যানেল - সাবস্ক্রাইব করুন 👍 
    
    
    
    
        
      
    
      
    
    

    টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য

    
    

    টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য


     


     




    
    

    👉নীচের ভিডিওটি ক্লিক করে জেনে নিন আমাদের ওয়েবসাইটের ইতিহাস এবং বিভিন্ন চাকুরী সম্পর্কিত পরিসেবাগুলি 📽️

    
    
    

    👉 জেনে আপনি আমাদের প্রয়োজনীয় পরিসেবা 📖

    👉ক্লিক করুন 🌐