অষ্টাদশ শতক কি অন্ধকার যুগ

ভারতের ইতিহাসে অষ্টাদশ শতকের গুরুত্ব অপরিসীম। এই শতকের মধ্যে দুইশো বছরের সুমহান ঐতিহ্যের অধিকারী মুঘল সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে এবং ভারতের বাণিজ্যিক অনৈক্য শাসনতন্ত্রের নৈরাজ্য সূত্রপাত হয়। তাই ঐতিহাসিকগণ এই যুগকে Dark Age বা নৈরাজ্যের যুগ বলে চিহ্নিত করেছেন।

অষ্টাদশ শতকের যুগ হলো পরিবর্তন ও রাজনৈতিক পালাবদলের যুগ। এই যুগে ইংরেজ বণিকের মানদণ্ড রাজদন্ডে পরিণত হয়েছিল। এই রাজনৈতিক পটভূমি পরিবর্তনের ফলে ভারত ইতিহাসের গতি বিভিন্ন খাতে প্রবাহিত হয়েছিল। পশ্চিমী সভ্যতার সংস্পর্শে এসে ভারত মধ্যযুগীয় অবস্থা থেকে আধুনিকতা পথে পা বাড়িয়েছিল।

অষ্টাদশ শতক কি অন্ধকার যুগ


👉 সম্রাট অভিজাতদের হাতের পুতুল

১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর ঘুঘল সাম্রাজ্যের পতন ঘটতে থাকে। ক্রমে মুঘল সাম্রাজ্যে দিল্লি ও আগ্রার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে এবং রাজনৈতিক অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলার সূত্রপাত ঘটে থাকে। মুঘল সাম্রাজ্যের বাঁধন থেকে দূরবর্তী প্রাদেশিক শাসনকর্তা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। মুঘল সম্রাটরা কেবলমাত্র মৌলিক আনুগত্য লাভেই সন্তুষ্ট থাকে। সম্রাটরা হয়ে পড়ে অভিজাতদের হাতের পুতুল। মুঘল সাম্রাজ্যের পক্ষে সার্বভৌম ক্ষমতা ভোগ করা ছিল একটি আকাশ-কুসুম ব্যাপার।


👉 বিভিন্ন নীতি হীনতা ও শক্তির জ্যোতির লড়াই

অষ্টাদশ শতক কি অন্ধকার যুগ

অষ্টাদশ শতকে মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের পর রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল, তা পূর্ণ করার ক্ষমতা কোন শক্তি ভারতে ছিল না। প্রকৃত ক্ষেত্রে সমগ্র শক্তির ন্যায় ভারতও অষ্টাদশ শতাব্দীতে কলঙ্কিত হয়ে আছে। নীতি হীনতা, আইন বিরোধী এবং তৎপরতার জন্যই এই শতক ছিল Might is right এর যুগ।

ন্যায় সংগঠন অধিকার ও ঐতিহ্যের কোন মূল্য ছিল না এই যুগে। উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং যে করে হোক ক্ষমতা দখল করাই ছিল অষ্টাদশ শতকের রাজনৈতিক যন্ত্র। তাই ভাগ্যান্বেষী ও সুযোগ-সন্ধানী ব্যক্তিরাই অষ্টাদশ শতকে রাজনীতির শিরোনামে উঠতে পেরেছিল। "যাদের বুকে ছিল দুর্জয় সাহস, বিচক্ষণতার তৎপরতা ও আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন"- অষ্টাদশ শতকের ইতিহাস গড়ে উঠেছে এই ধরনের মানুষের জীবনকে কেন্দ্র করে। 


👉 বিভিন্ন স্বাধীন ও প্রাদেশিক শাসক এর উৎপত্তি

মুঘল সাম্রাজ্যের ধ্বংসস্তূপের ওপর গড়ে উঠেছিল একাধিক রিয়াসাত ও প্রাদেশিক শাসন। সেগুলির মধ্যে ছিল বাংলা, অযোধ্যা, হায়দ্রাবাদ। বাংলার মুর্শিদকুলি খাঁ বাংলা স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই শাসনের ক্ষেত্রে বলা যায় যে, তা মুঘল সাম্রাজ্যের শাসন সরাসরিভাবে মানলেও নিজ নিজ জায়গায় তারা স্বাধীন ক্ষমতা ভোগ করতেন। অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগে ভাগ্যান্বেষী হায়দার আলী মহীশুরের নন্দরাজকে সরিয়ে দিয়ে স্বাধীনভাবে রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।


👉 মারাঠাদের প্রভাবশালী হয়ে ওঠা ও পতন

অষ্টাদশ শতকের ইতিহাস হল চরম শতকের ইতিহাস। ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর শিখ, জাঠ, রাজপুত এবং মারাঠারা সম্পূর্ণভাবে মুঘল সাম্রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কেন্দ্রীয় মুঘল সম্রাটদের দুর্বলতার সুযোগে মারাঠারা সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী ও ক্ষমতা সম্পূর্ণ হয়ে উঠে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো যে, ১৭৬১ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় পানিপথের তাদের পরাজয় সারা ভারতজুড়ে সাম্রাজ্য স্থাপনের স্বপ্নকে চিরতরে ভাবে চুরমার করে দিয়েছিল। এই যুদ্ধের ধাক্কায় মারাঠারা সাফল্যে উঠতে পারিনি। সুতরাং বলা যেতে পারে যে, মারাঠাদের রাজনৈতিক প্রাধান্যের পথে এই অষ্টাদশ শতকে এক জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল।



👉 বৈদেশিক আক্রমণের সূত্রপাত

অষ্টাদশ শতক কি অন্ধকার যুগ

অষ্টাদশ শতকে যখন রাজনৈতিক ঐক্য বৃদ্ধি পেয়েছিল, ঠিক তখনই বৈদেশিক আক্রমণ সূত্রপাত হয়েছিল। নাদির শাহ ভারত আক্রমণ করে দিল্লিকে প্রায় শ্মশানে পরিণত করে। কহিনুর মনি, শাহজাহানের ময়ূর সিংহাসন সহ বহু রত্নাবলী তিনি স্বদেশে নিয়ে যান এবং অষ্টাদশ শতকের মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি ঊর্ধ্বে এক বিরাট ফাটলের সৃষ্টি করে, এর ফলে মুঘল সাম্রাজ্যের সম্মান সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হয়। এই অষ্টাদশ শতকেই খুলে দিয়েছিল ভবিষ্যতের বৈদেশিক আক্রমণ এর দরজা। আহমদ শাহ আবদালী প্রায় কুড়ি বার ভারত আক্রমণ করে মুঘল সাম্রাজ্যকে ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছিল। আবদালী স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পর দেশীয় শিখরা পাঞ্জাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। তাই এক কথায় বলা যায় যে, অষ্টাদশ শতকের মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের যুগে রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি করেছিল।



👉 ইউরোপীয় কোম্পানির বাণিজ্য লাভ

অষ্টাদশ শতক কি অন্ধকার যুগ

ঠিক এই প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় বণিক কোম্পানিগুলি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আক্রমণ অষ্টাদশ শতকে নৈরাজ্য ও অরাজকতা সুযোগকে যথাযথভাবে কাজে লাগায়। মুঘল সম্রাট ফারুকশিয়ার কাছ থেকে দস্তক লাভ এর ফলে তাদের বাণিজ্য দ্রুত বাড়তে থাকে। এই দশকের জোরে ইউরোপীয়রা অন্যান্য বাণিজ্যিক গোষ্ঠী গুলির সঙ্গে অনেকটাই এগিয়ে যায় এবং পলাশীর যুদ্ধে তাদের জয়লাভ করে, এই জয়লাভকে ভিত্তি করে দেওয়ানি লাভের মধ্য দিয়ে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মানদণ্ড রাজদন্ডে পরিণত করে।


👉 উপসংহার

পরিশেষে বলা যায় যে, অষ্টাদশ শতক হলো জটিল নৈরাজ্য ও অনৈতিকতা যুগ। কিন্তু ইংরেজিতে ঐতিহাসিকরা অষ্টাদশ শতকে যথার্থ নৈরাজ্যের যুগ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন, তাঁদের মধ্যে কিছুটা বাড়াবাড়ি হয়েছিল বলে এর সমর্থনে বলেছেন যে, পুরাতন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং নতুন কাঠামো গড়ে উঠে চলছে। পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধ বাংলা তথা ভারতের আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনকে সম্পূর্ণভাবে বদলে না দিলেও এই দুটি যুদ্ধ ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছিল। সুতরাং উনিশ শতকের বীজ অষ্টাদশ শতকের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল, এখানেই অষ্টাদশ শতকের গুরুত্ব।



📝তথ্যসূত্র

  1. সতীশ চন্দ্র, "মধ্যযুগে ভারত"।
  2. শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়, "অষ্টাদশ শতকের মুঘল সংকট ও আধুনিক ইতিহাস চিন্তা"।
  3. অনিরুদ্ধ রায়, "মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের ইতিহাস"।

    📝সম্পর্কিত বিষয়

    সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো। আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন।🙇‍♂️
      ...............................


    নবীনতর পূর্বতন
    👉 আমাদের WhatsApp Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
    
        
      
      👉 আমাদের WhatsApp Channel- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
    
    
      
    
       
    
        👉 আমাদের Facebook Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
    
    
      
    
       
      
      
        👉 আমাদের Facebook Page-ক্লিক করুন 🙋‍♂️
    
    
        👉আমাদের YouTube চ্যানেল - সাবস্ক্রাইব করুন 👍 
    
    
    
    
        
      
    
      
    
    

    টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য

    
    

    টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য


     


     




    
    

    👉নীচের ভিডিওটি ক্লিক করে জেনে নিন আমাদের ওয়েবসাইটের ইতিহাস এবং বিভিন্ন চাকুরী সম্পর্কিত পরিসেবাগুলি 📽️

    
    
    

    👉 জেনে আপনি আমাদের প্রয়োজনীয় পরিসেবা 📖

    👉ক্লিক করুন 🌐