মহম্মদ বিন তুঘলকের পরিকল্পনা

গিয়াসউদ্দিন তুঘলক এর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র জুনা খাঁ আরোহন করে দিল্লির সিংহাসনে বসেন। আবার জুনা খাঁ ভারতের ইতিহাসে মুহাম্মদ বিন তুঘলক নামে পরিচিত ছিলেন। 

অসাধারণ মৌলিকত্ব ও সৃজন শক্তির অধিকারী মুহাম্মদ বিন তুঘলক ছিলেন এক অদ্ভুত চরিত্রের মানুষ ছিলেন। পাণ্ডিত্য, চারিত্রিক দৃঢ়তা ও উচ্চ ভাবাদর্শে ভারতের ইতিহাসের মধ্যযুগের কোন সুলতানি শাসক তাঁর সমকক্ষ ছিল না। জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তাঁর অবাধ বিচরণ ছিল। বীরযোদ্ধা, সুশাসক, বুদ্ধিমান, দানশীলতা ও উদার হৃদয়ের নরপতি হিসেবে তিনি সুপরিচিত ছিলেন। 

বিভিন্ন উন্নত গুণাবলী অধিকারী হয়েও কেবলমাত্র ধৈর্যশীলতা, অস্থিরচিত্ততা ও অদূরদর্শিতার জন্য তিনি নিষ্ঠুর, রক্তপিপাসু এমনকি উন্মাদ হিসাবে অভিহিত হয়েছেন। প্রজাদের মঙ্গলের জন্য তিনি যেসব পরিকল্পনা গ্রহণ করেন তাঁর পিছনে যথেষ্ট যুক্তি থাকলেও ধৈর্যহীনতা ও বাস্তব বুদ্ধির অভাবে তা ব্যর্থ হয়ে প্রজাপীড়নের কারণে রূপান্তরিত হয়েছে।

মহম্মদ বিন তুঘলকের পরিকল্পনা


মহম্মদ বিন তুঘলকের বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা

সিংহাসনে আরোহণের পরেই মুহাম্মদ বিন তুঘলকের শাসন ব্যবস্থার কিছু নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। এর সম্পর্কে তাঁর রাজস্ব-সংক্রান্ত ব্যবস্থা অতি গুরুত্বপূর্ণ। রাজস্ব ব্যবস্থার উন্নতির জন্য তিনি সাম্রাজ্যে আয় ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন এবং সাম্রাজ্যের সবর্ত্র একই হারে রাজস্ব আদায় করে এবং তাঁর হিসাব নিরীক্ষা নিয়মিতভাবে দিল্লি পাঠানোর জন্য প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের নির্দেশ দেন।

👉 গঙ্গা-যমুনা দোয়াব অঞ্চলে রাজস্বের হার বৃদ্ধি

মহম্মদ বিন তুঘলকের পরিকল্পনা

গঙ্গা-যমুনা দোয়াব অঞ্চলে রাজস্বের হার বহুগুণ বৃদ্ধি করেন। এই সময় সেখানে কয়েক বছর বৃষ্টি না হওয়ার জন্য কৃষকদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে। সুতরাং কৃষকদের বাড়তি কর না দেওয়ার জন্য কৃষিকাজ ত্যাগ করে বনাঞ্চলে পালিয়ে যান। এর ফলে কৃষিকাজ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা যায়। শেষে কৃষকদের অবস্থা জানার পর সুলতান তাদেরকে অন্ন, অর্থ, বীজ, কৃষি ঋণ দান এবং রাজস্ব গ্রাস ও জলসেচ প্রভৃতির ব্যবস্থা করেন।


👉 রাজধানী স্থানান্তর

তিনি দিল্লি থেকে দাক্ষিণাত্যে দেবগিরিতে রাজধানী স্থানান্তর করে এবং তার নাম রাখেন দৌলতাবাদ। তবে এই জায়গাটি উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে সন্নিকটে অবস্থিত হওয়ায় দিল্লিতে সর্বদাই মঙ্গল আক্রমণের সম্ভাবনা দেখা দেয়। কিন্তু দেবগিরিতে তা ছিল না। দেবগিরি থেকে দাক্ষিণাত্যে সুলতানি শাসন পরিচালনা করা খুব সহজতর ছিল। বলাবাহুল্য কেবলমাত্র সরকারি দপ্তরগুলি স্থানান্তর করে তিনি শান্ত হননি, তার সঙ্গে অন্ধ, ভিক্ষুক, বৃদ্ধ সকলেই দিল্লি থেকে দেবগিরিতে যেতে বাধ্য করান। এর ফলে নাগরিকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়।

আবার কিছুদিনের মধ্যে দিল্লিতে রাজধানী স্থানান্তরিত করে এবং জনসাধারণকে আবার দেবগিরি থেকে দিল্লি যাওয়ার নির্দেশ দেন। এর ফলে জনসাধারণ দুর্দশা ক্রমাগত বৃদ্ধি পায় এবং রাজকীয় অর্থে বিনাশ সাধন হয়। নানা কারণে রাজধানী স্থানান্তরকরণের ব্যাপারটি হয়তো যুক্তিসম্মত ছিল, কিন্তু নাগরিকদের আসা-যাওয়া ব্যাপারটি অপরিণামদর্শিতা পরিচয় মাত্র।


👉 প্রতীকী মুদ্রা প্রচলন

মহম্মদ বিন তুঘলকের পরিকল্পনা
মুদ্রা

রাজকোষের অর্থাভাব মেটানোর উদ্দেশ্যে রৌপ্য মুদ্রার পরিবর্তে চিনো-পারস্যের অনুকরণে তিনি এক ধরনের প্রতীকী মুদ্রা প্রচলন করেন। ‌ এটি ছিল তার সর্বাপেক্ষা মারাত্মক পরীক্ষামূলক পরিকল্পনা। নানা ধরনে কারণে এই ধরনের মুদ্রা প্রচলন যুক্তিপূর্ণ হলেও, যাতে এই মুদ্রা জাল না হয়ে যায়, সেই দিকে তিনি সতর্কমূলক দৃষ্টি নিক্ষেপ করেননি। এর পরিণাম স্বরূপ সমস্ত দেশ জাল নোটে ভরে যায়। বিদেশি বণিকরা এই জালনোট নিতে নারাজ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত সুলতান সেই নোট প্রত্যাহার করেন এবং ব্রঞ্চ এর পরিবর্তে রৌপ্য মুদ্রা প্রদানে বাধ্য হন। এর ফলে সাম্রাজ্যের আর্থিক ভিত্তি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ে।


উপসংহার

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী মহম্মদ বিন তুঘলক সাম্রাজ্যের বিশালতা যেভাবে বাড়িয়ে ছিলেন, ইতিপূর্বে কোন শাসকরা বিস্তার করতে পারেননি। সমগ্র মধ্য যুগে তাঁর মতো পন্ডিত বা যুক্তিবাদী কোন শাসক দিল্লীর সিংহাসনে বসেননি। তাঁর আমলে দিল্লি সুলতানি শাসনের চরম শিখরে পৌঁছে ছিল, আবার তাঁর আমলে সাম্রাজ্যে ভাঙ্গন এর সূত্রপাত ঘটে।

অধ্যাপক ঈশ্বরী প্রসাদ এর মতে- তাঁর প্রতিটা পরিকল্পনা যুক্তিযুক্ত ছিল, কিন্তু কেবলমাত্র ধৈর্যহীনতা, বাস্তব বুদ্ধির অভাব এবং ত্রুটিপূর্ণ প্রয়োগ পদ্ধতি ফলে তাঁর পরিকল্পনাগুলি ব্যর্থ হয়। যাইহোক মৃত্যুর কিছুকাল পূর্বে তিনি ঐতিহাসিক বরণীকে বলেছেন- "আমার রাজ রোগ গ্রস্থ কোন চিকিৎসক তাকে সুস্থ করতে পারবে না"। আবার অধ্যাপক রমেশচন্দ্র মজুমদার এর মতে, তাঁর চরিত্র ও কর্মপ্রণালী বহুলাংশে দিল্লি সুলতানি পতনকে ত্বরান্বিত করেছিল।



📝তথ্যসূত্র

  1. Poonam Dalal Dahiya, "Ancient and Medieval India".
  2. Upinder Singh, "A History of Ancient and Early Medieval India: From the Stone Age to the 12th Century".

    📜সম্পর্কিত বিষয়

    সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো। আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন।🙇‍♂️

                         -----------------------------


    নবীনতর পূর্বতন
    👉 আমাদের WhatsApp Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
    
        
      
      👉 আমাদের WhatsApp Channel- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
    
    
      
    
       
    
        👉 আমাদের Facebook Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
    
    
      
    
       
      
      
        👉 আমাদের Facebook Page-ক্লিক করুন 🙋‍♂️
    
    
        👉আমাদের YouTube চ্যানেল - সাবস্ক্রাইব করুন 👍 
    
    
    
    
        
      
    
      
    
    

    টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য

    
    

    টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য


     


     




    
    

    👉নীচের ভিডিওটি ক্লিক করে জেনে নিন আমাদের ওয়েবসাইটের ইতিহাস এবং বিভিন্ন চাকুরী সম্পর্কিত পরিসেবাগুলি 📽️

    
    
    

    👉 জেনে আপনি আমাদের প্রয়োজনীয় পরিসেবা 📖

    👉ক্লিক করুন 🌐