ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে পুরনো অর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস হলেও শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যাহত হয়নি। এই সময় শিক্ষা ব্যবস্থার দুটি স্তর লক্ষ্য করা যায় যথা, প্রাথমিক ও উচ্চশিক্ষা স্তর। দুটি হিন্দু ও মুসলিমদের জন্য স্বতন্ত্র বিদ্যালয় ছিল। ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া ব্রিটিশ কোম্পানি সনদ আইন পাস হলে শিক্ষাতে শিক্ষার উন্নতি কালে এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু এই এক লক্ষ টাকা নিয়ে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য শিক্ষাতে ব্যবহার করা তা নিয়ে দ্বন্দ্ব বা বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
প্রাচ্যবাদী মতবাদের প্রবক্তাদের মধ্যে ছিল প্রিন্সেপ উইলসোন, উইল ফিন্স, কোলব্রুক প্রমুখ গন। প্রাচ্যবাদী মতাদর্শের প্রাধান্য ছিল কর্নওয়ালিস সময় থেকে এর উপর আঘাত আসে। জেমস মিল ভারতীয়দের আন্তরিকতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেন। কর্নওয়ালিস ও জেমস মিলের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরবর্তীকালে পাশ্চাত্যবাদীদের সাহায্য কালেও প্রাচ্যবাদীদের প্রভাব তখনও বজায় ছিল। হেলি মেকানজি পাশ্চাত্যের সঙ্গে প্রাচ্য বিজ্ঞান সমন্বয়ের কথা বলেন। একমাত্র এশিয়াটিক সোসাইটি শুধুমাত্র প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা সাংস্কৃতিক চর্চা হত।এই সময় প্রাচ্য মতবাদের প্রক্রিয়া হিসেবে পাশ্চাত্যবাদী গোষ্ঠীর প্রভাব বৃদ্ধি পায়।
১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে মাউন্ট ইস্টু আল্টিনশন একটি প্রতি বেদনে ভারতের পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে মত প্রকাশ করেছেন। ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে টমাস মেকলে গভর্নর জেনারেল কাউন্সিলের আইনসভা ও জনশিক্ষা কমিটির সভাপতি পদে নির্বাচিত হলে প্রাচ্য বাদী ও পাশ্চাত্যবাদীদের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে শুরু করে। এই সময় থেকে প্রাচ্যবিদ্যা কে অভগতা চোখে দেখা হয়। এই সময় সদূম্ভ বলেন যে, ভারত ও আরবের সমগ্র দেশীয় সাহিত্য ইউরোপীয় অনুসারে একটিমাত্র তাকে সাজানো বইয়ের সমান। মেকলের বক্তব্যের মূল ছিল ইংরেজি ভাষার মাধ্যম ভারতীয়দের ইউরোপীয় সাহিত্য ও বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলে। তিনি আরো স্পষ্ট বলেন যে প্রতিষ্ঠানগুলি ভারতীয় ভাষায় শিক্ষালাভ করলে তারা সরকারি অনুদান থেকে বঞ্চিত হবেন।
লর্ড মেকলে কার্যাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে জনশিক্ষা কমিটি কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। একদিকে প্রাচ্যবাদী গোষ্ঠী অপরদিকে পাশ্চাত্যবাদী গোষ্ঠী। এই সময় প্রাচ্যবাদীরা পাশ্চাত্য শিক্ষার ক্ষেত্রে অর্থ বরাদ্দ করাকে সমালোচনা করেন। কিন্তু প্রাচ্যবাদীদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও ১৭৩৬ খ্রিস্টাব্দে মার্চ মাসে লর্ড বেন্টিক মেকলে প্রস্তাব গুলির অনুমোদন করেন। বেন্টিকের সময় সরকারি সিদ্ধান্ত প্রাচ্যবাদীদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল।
✍️উপসংহার
পরিশেষে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, মেকলের দৃষ্টিভঙ্গি ও পাশ্চাত্যের বিভিন্ন মন্তব্য ভারতীয়দের বিরোধী মনোভাব ও ভারতের প্রধান গৌরব সম্পর্কে অবজ্ঞা প্রসূত হলেও একথা অস্বীকার করা যায় না। যে সমসাময়িক ইউরোপীয় সাহিত্য ও বিজ্ঞান ভারতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের চেয়ে অনেক উন্নত ছিল। রাজা রামমোহন রায় তা উপলব্ধি করেছিলেন এবং তিনি আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার দাবীদার ছিলেন।
............. সমাপ্তি...........
✍️লেখিকা পরিচিতি
👉 তথ্যসূত্র
- সুমিত সরকার, "আধুনিক ভারত"
- শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়, "পলাশি থেকে পার্টিশন"
- Ishita Banerjee-Dube, "A History of Modern India".
✍️সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো। আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন🙏।