আওরঙ্গজেব বা ঔরঙ্গজেবের ধর্মনীতি

সম্রাট শাহজাহানের পুত্র আওরঙ্গজেব বা ঔরঙ্গজেব প্রায় 50 বছর তার শাসনকার্য পরিচালনা করেন। কিন্তু তার রাজত্বকালে শেষ দিকে পতনের বিভিন্ন দিক পরিলক্ষিত হয়। তার এই পতনের পিছনে দায় ছিল, তার বিভিন্ন নীতি এবং এগুলির মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য ছিল তার ধর্মীয় নীতি।
আওরঙ্গজেব-বা-ঔরঙ্গজেবের-ধর্মনীতি

                 মুঘল সাম্রাজ্যের মানচিত্র

                Author- Santosh.mbahrm
               Date- 26 September 2015
             Source- wikipedia (check here)
     License- GNU Free Documentation License


  📽️ভিডিও



আওরঙ্গজেব ইসলামের অনুশাসনগুলি মান্য করে দেশ শাসন করতে চেয়েছিল। তিনি ভারতকে দার-উল-হারব (বিধর্মী রাষ্ট্রে) থেকে দার-উল-ইসলামে(ইসলামী রাষ্ট্র) পরিণত করতে চেয়েছিলেন।

আধুনিক ঐতিহাসিকরা মনে করেন যে, আওরঙ্গজেব ধর্মীয় নীতি ক্ষেত্রে কোন নতুন নীতি অনুসরণ করেননি এবং তিনি মনে-প্রাণে ধর্মীয় গোড়া মুসলিম হলেও রাজনীতিবিদ হিসেবে সাম্রাজ্যের সংহতি রক্ষার জন্য হিন্দু জনগণের সমর্থন হারাতে চাননি।

সম্রাট আকবরের আমলে প্রতিদিন সকালে জনসাধারণকে দর্শন দানের জন্য যে "দর্শন" প্রথা চালু ছিল, তা আওরঙ্গজেব সেটি বাতিল করে। সম্রাটের জন্মদিনের সম্রাটের দেহের ওজনের সমান সোনা-রুপা দান করার প্রথা তিনি বন্ধ করে দেন।

আওরঙ্গজেব-বা-ঔরঙ্গজেবের-ধর্মনীতি
মসজিদ


তিনি দরবারে নিত্য-গীত ও গান-বাজনা বন্ধ করে দেন।  অধিকাংশ গায়ক ও বাদককে তিনি দিল্লি থেকে বহিষ্কার করেন। মদ্যপান ও জুয়া খেলা নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেন। তিনি চিত্রকলাকে ইসলাম বিরোধী কাজ বলে মনে করে চিত্রাঙ্কন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেন।

তার নির্দেশে কালিমা খোদাই করা নিষিদ্ধ করা হয়। পীরের দরগায় বাতি দেওয়া নিষিদ্ধ করে করে দেই। দিল্লি থেকে নর্তকীদের ও গণিকাদের বাইরে পাঠিয়ে দেন এবং তিনি এইসব নারীদের বিয়ে করে সংসার জীবন পালনের নির্দেশ দেন।

তিনি মৌলবি উলেমাদের উদারভাবে সাহায্য করেন। দরবারে তাদের বিশেষ মর্যাদা দান করেন। তিনি মৌলবি ও মোল্লাদের ধর্মীয় পদে নির্দিষ্ট বেতন ভোগী রূপে তাদের নিযুক্ত করেন। মোল্লা, মৌলবিদের জন্য সম্রাট রাজকোষের প্রচুর অর্থ ব্যয় করে এবং নিষ্কর জমিও দান করেন।

আওরঙ্গজেব-বা-ঔরঙ্গজেবের-ধর্মনীতি
দীপাবলি বা দেওয়ালি


তিনি হিন্দুদের হোলি, দীপাবলি বা দেওয়ালি ও বসন্ত উৎসব নিষিদ্ধ করেন। তিনি অমুসলমানদের উপর জিজিয়া কর ধার্য করেন।

উপরিউক্ত ধর্মীয় বিষয়গুলি আওরঙ্গজেব প্রথম মুঘল সাম্রাজ্যের পতনকে তরান্বিত করেন। ঐতিহাসিক জে. এন. সরকারের মতে, আওরঙ্গজেব আকবরের সমন্বয়বাদী ধর্মীয় নীতি ছেড়ে ভারতবর্ষকে ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করার যে চেষ্টা করেছিলেন, তা তিনি ভুল করেছেন‌। আকবর সুল-ই-কুল বা ধর্ম নিরপেক্ষতা নীতি অবলম্বন করেছিলেন, কিন্তু আওরঙ্গজেব সেই ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির সারমর্ম বুঝতে না পেরে আওরঙ্গজেব মুঘল সাম্রাজ্যের পতন ঘটান‌।

আওরঙ্গজেবের ধর্মীয় নীতি তার বুদ্ধিকে লুপ্ত করে ফেলেছিল, যেমন- শিব গুরু তেগ বাহাদুরকে তার ধর্মান্ধতার জন্য প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়। তার ধর্ম নীতির জন্য জাট, সৎনামী, বুন্দেলা শিখ, রাজপুত ও মারাঠারা বিদ্রোহী হয়ে তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেন এবং মুঘল সাম্রাজ্যের পতনকে ত্বরান্বিত করে। তিনি শিয়া সম্প্রদায়ের বেশ কিছু মসজিদ ভেঙে দিয়েছিলেন, এর ফলে তার পতন ঘটতে বেশি দেরি হয়নি।

কিছু কিছু ঐতিহাসিক আওরঙ্গজেবের ধর্মীয় নীতিকে একটু অন্য রকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন। জহিনুদ্দিন ফারুকি তার গ্রন্থে বলেছেন, তিনি যে হিন্দু নির্যাতন করেছিলেন, এর পিছনে কোন প্রমাণ নেই। তৎকালীন বিভিন্ন গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, মুসলিম রাষ্ট্রে পুরাতন মন্দির থাকতে পারে, কিন্তু নতুন মন্দির নির্মাণ করা যাবে না। আওরঙ্গজেব তার ফরমানে স্পষ্ট নির্দেশ দেন যে, পুরাতন মন্দির অক্ষত থাকবে, কিন্তু নতুন মন্দির নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হবে না।

পরিশেষে বলা যায় যে, আওরঙ্গজেব ছিল গোড়া সুন্নি মুসলমান‌‌। তিনি যে ইসলাম শাস্ত্রে সুপন্ডিত ছিলেন- একথা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু তা সত্ত্বেও বলতে হয় যে, তিনি যে ধর্মীয় নীতিগুলি অনুসরণ করেছিলেন, সেইগুলি সেই যুগে উপযোগী ছিল না।

অধ্যাপক যদুনাথ সরকার, শ্রীরাম শর্মা, ঈশ্বরী প্রসাদশ্রীবাস্তব প্রমুখেরা এক বাক্যে স্বীকার করেছেন যে, তিনি ছিলেন একাধারে রাষ্ট্র নেতা এবং অপরদিকে ধর্মীয় নেতা।

তাই আমরা বলতে পারি যে, হিন্দু প্রধান রাষ্ট্রে আওরঙ্গজেব যে নীতি গ্রহণ করেছিলেন, তা বাস্তবতা বর্জিত। এই অমুসলিম রাষ্ট্রে হিন্দু-মুসলিমদের প্রতি সহনশীলতা নীতিকে মধ্যযুগের সকল শাসকই গ্রহণ করেছেন এবং সেই সহনশীলতা আজও বর্তমান, এই সহনশীলতাই আমাদের কাম্য এবং ভারত রাষ্ট্রে এটাই ভবিষ্যৎ হওয়া উচিত।



👉তথ্যসূত্র

  1. সতীশ চন্দ্র, "মধ্যযুগে ভারত"
  2. শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়, "অষ্টাদশ শতকের মুঘল সংকট ও আধুনিক ইতিহাস চিন্তা"
  3. অনিরুদ্ধ রায়, "মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান-পতনের ইতিহাস".

    ✍️সম্পর্কিত বিষয়

    সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো। আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন🙏।

                  ......................................................

    নবীনতর পূর্বতন
    👉 আমাদের WhatsApp Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
    
        
      
      👉 আমাদের WhatsApp Channel- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
    
    
      
    
       
    
        👉 আমাদের Facebook Group- ক্লিক করুন 🙋‍♂️
      
    
    
      
    
       
      
      
        👉 আমাদের Facebook Page-ক্লিক করুন 🙋‍♂️
    
    
        👉আমাদের YouTube চ্যানেল - সাবস্ক্রাইব করুন 👍 
    
    
    
    
        
      
    
      
    
    

    টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য

    
    

    টেলিগ্রামে যোগ দিন ... পরিবারের সদস্য


     


     




    
    

    👉নীচের ভিডিওটি ক্লিক করে জেনে নিন আমাদের ওয়েবসাইটের ইতিহাস এবং বিভিন্ন চাকুরী সম্পর্কিত পরিসেবাগুলি 📽️

    
    
    

    👉 জেনে আপনি আমাদের প্রয়োজনীয় পরিসেবা 📖

    👉ক্লিক করুন 🌐